কর্ণফুলীতে দল গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, গ্রুপ বলয়ে বিভক্ত আ.লীগ
জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ফের দল গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। উপজেলা নেতারাও তুলে আনছেন দলের দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত, পরিশ্রমী ও মেধাবীদের। মূলত আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার টার্গেট নিয়েছে দলটি।
অন্যদিকে, কর্ণফুলীতে নানা দ্বন্দ্ব, গ্রুপ ও নেতৃত্ব নিয়ে চরম কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন কমিটির সম্মেলন না হওয়া, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগে। যার প্রভাবে উপজেলা থেকে শুরু তৃণমূল পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ইউনিয়ন জুড়ে গ্রুপিং বা বিরোধ রয়েছে। এসব বিরোধ কখনো সরব কখনো নীরব।
ওদিকে, দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছেন কর্ণফুলী বিএনপি। যদিও দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রম হচ্ছে রুটিন ওয়ার্ক। রুটিন মাফিক যে কার্যক্রম, সেই কার্যক্রমে জোর দিয়েছেন।
সাধারণ লোকজন জানিয়েছেন ভিন্ন কথা, তাঁরা বলছেন, কর্ণফুলী আনোয়ারা এক সময় বিএনপির দুর্গ ছিল। কিন্তু এখন বিএনপিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। নানা গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সাবেক সাংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম এর কারণে আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে বিএনপি জিমিয়ে পড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া ও সদস্য সচিব মো. ওসমান দলের হাল ধরেছেন। নেতাকর্মীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। আনন্দে ভাসছেন নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর উপস্থিতি বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কৌশল নির্ধারণ করেছেন। দলের শৃঙ্খলা বিনষ্টের অভিযোগে দলের একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানদের বহিষ্কার করে দুরে সরিয়ে রেখেছেন। আবার অনেক চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধীতা করলেও বুকে টেনে পদ পদবি দিয়েছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক ভাবে হতাশ। স্বয়ং দলের ভেতরে নানা কোন্দ্ল। নানা বলয়। নানা গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীরা।
সাধারণ কর্মী সমর্থকরা বলছেন, এসব অভ্যন্তরীণ এ গ্রুপিং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। দল মত নির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে একই কাতারে আনতে না পারলে মাঠে ঠিকে থাকা কঠিন হবে। তূণমূল নেতারা এটাও বলছেন, একটানা প্রায় ১৪ বছর সরকারে থেকেও সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে পারেনি কর্ণফুলী আওয়ামী লীগ। দল নয়, নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। দলের নেই কোনো নিজস্ব কার্যালয়। এরপর সাংগঠনিক শক্ত অবস্থান গড়ে তোলায় মনোযোগ নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের।
উল্টো অভিযোগ রয়েছে অনেক নেতা বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। তাদের অভিযোগ গুটিকয়েক নেতাই একচ্ছত্র আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক সভা না করেই এদের সিদ্ধান্তে চলছে দলের কর্মকাণ্ড।
একই উপজেলায় থাকা বিএনপি এরমধ্যে কর্ণফুলী বিএনপির পাঁচ ইউনিয়নে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছেন। তার মধ্যে চরলক্ষ্যা ও বড়উঠান ৯টি ওয়ার্ডের কমিটি করে সম্মেলনের মাধ্যেমে দুই ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করেছেন। এতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম প্রধান অতিথি ও দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বিশেষ অতিথি হয়ে দুই ইউনিয়ন পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছেন। শিগগরই বাকি চরপাথরঘাটা, শিকলবাহা ও জুলধা ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি শেষ করে সম্মেলন করে পূর্নাঙ্গ কমিটি করবেন। ধারাবাহিকভাবে কর্ণফুলীতে বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, তাতী দল, ছাত্রদলের কমিটিও দিচ্ছেন।
কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া জানিয়েছেন, পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান কর্ণফুলী বিএনপি অনেকটা গোছালো সুন্দর ও শক্তিশালী সংগঠন। একই কথা জানিয়েছেন চরলক্ষ্যা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন জুয়েল। বর্তমান কর্ণফুলী বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া বিএনপি রাজনীতির এক ডায়নামিক লিডার। সৎ সাহস ও অনুপ্রেরণার দেওয়ার বাতিঘর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ওদিকে, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নড়েবড়ে অবস্থান দেখে স্বয়ং দলের একাধিক নেতারা মন্তব্য করেছেন, বিএনপি ভেতরে ভেতরে অনেকটা শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে। সে হিসেবে কর্ণফুলী আ.লীগের নেতাকর্মীরা উপজেলাব্যাপী ফেস্টুন ব্যানার বিলবোর্ড দিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে গতি ফিরে আনতে মরিয়া হচ্ছেন বেশি। নেতাকর্মীদের খোঁজখবর না নিয়ে দলের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করেছেন। এছাড়া নেতৃত্ব ও ভাগবাটোয়ারার হিসাব নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমেও নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় কোনো প্রভাবশালী নেতার আগমন ঘটলে বিশেষ ব্যবস্থায় লোকজন উপস্থিত করানো হয়। সরকারের সফলতা আর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তৃণমূলের সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরে তাদের প্রভাবিত করার কোনো উদ্যোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান তালুকদার বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। মূলত দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ওই নির্বাচনে জনসমর্থন নিয়ে ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার বিপল্প নেই আওয়ামী লীগের। এ জন্য মাঠে ময়দানে কাজ করছে কর্ণফুলী আওয়ামী লীগ।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বলেন, সরকারের করা উন্নয়নচিত্র পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের মাঝে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এই কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে কর্ণফুলী আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।’
(জেজে/এএস/জুলাই ১৫, ২০২৩)