কর্ণফুলীর বর্জ্য গিলে খাচ্ছে কর্ণফুলী নদী!
জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর উপজেলার বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে পলিথিন, প্লাষ্টিকসহ দূষিত বর্জ্য পানি কৃষি জমি হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে ১৬১ কিলোমিটারের সর্পিলাকার কর্ণফুলী নদী। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা রয়েছে।
কেননা, কর্ণফুলীর বিভিন্ন কারখানার মধ্যে দু’একটি ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) স্থাপন হলেও অধিকাংশ কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ অপসারণের জন্য নিজস্ব কোন প্লান্টেশন নেই। ফলে, এসব বর্জ্য ছোটখাটো খাল ও ড্রেন দিয়ে প্রবেশ করছে নদীতে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দুষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বর্জ্য আর হাওরের পানি একাকার হয়ে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/পরিবেশ জেনেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশা বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে।
জানা যায়, কর্ণফুলীতে দেড় শতাধিক ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্প কারখানার বর্জ অপসারণের জন্য নিজস্ব কোন ব্যবস্থাপনা না থাকায় পলিথিন, প্লাস্টিকের বর্জ্য ও দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে পাশের নদীতে। শুধু প্লাস্টিক আর পলিথিন নয়, রাবার ও ক্যামিকেল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যও গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। ফলে কৃষকরা চাষাবাদের জন্য জমিতে নামতে গিয়ে দূষিত বর্জ্য লেগে চর্মসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষ ও বেলা, পরিবেশ অনেকটা নির্বীকারই বলা যায়। স্থানীয় কৃষকদের বক্তব্য, এসব কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে তাই বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা নিলে হয়তো রক্ষা হবে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে এসব কারখানার এডিমিন, পাবলিক রিলেশন অপারেশন অফিসার ও একাধিক মুখপাত্ররা বলেন, ‘কর্ণফুলীতে ছোট বড় কয়েক শতাধিক শিল্প কারখানার মধ্যে বর্জ্য শোধানাগার বা ইটিপি প্ল্যান্ট কয়টির আছে আমাদের কাছে জানা নেই। সবাই যেভাবে কারখানা ও ফ্যাক্টরী চালাচ্ছে। আমরাও সেভাবে চালাচ্ছি। তবে দ্রুত ইটিপি চালু করতে চেষ্টা করব। যাতে বিষাক্ত বর্জ্য বাহিরে বা নদীতে না পড়ে।’ অনেকে জানান, কালুরঘাট সেতুর নিচের পানি অনেকটা স্বচ্ছ। কিন্তু কর্ণফুলী তৃতীয় সেতুর নিচের পানি ভয়াবহ বিষাক্ত আর ঘোলাটে।
কর্ণফুলী উপজেলার বিশ্ব বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মাহমুদ বলেন, ‘কর্ণফুলী উপজেলায় গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত অসংখ্য কারখানা। যেখানে মানা হচ্ছে না জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষার প্রটোকল। কর্ণফুলীর আনাচে কানাচে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে এমন অনেকগুলো কারখানা। যেগুলো পরিবেশ এবং জীব জগৎকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কর্ণফুলী নদীতে অবাধে বিষাক্ত পানি ফেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কর্ণফুলী নদী হারিয়ে যাবে।’
নোঙ্গর এর পরিবেশকর্মী সুমন শামস বলেন, ‘আমরা কৃষিজমিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চাই না। এসব শিল্পদূষণে যেসব ক্ষতি হয়েছে এর নিরপেক্ষ তদন্ত করে এলাবাসীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। না হয় অপরিকল্পিত নগরায়নে তীব্র পানি সংকট ও সুস্থ্য বায়ু সংকটে পড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।’ তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, সরেজমিন পরিদর্শন করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘মিল কারখানা বা ফ্যাক্টরীতে ইটিপি করা বাধ্যতামূলক। ইটিপি এমন একটি প্রক্রিয়া বা নকশা যার মাধ্যমে শিল্প উৎপাদনের জন্য ব্যবর্হৃত পানি সমূহের বর্জ্য হতে পারে তা কঠিন বর্জ্য বা রাসায়নিক বর্জ্য অপসারণ করে তা পুনর্ব্যবহারের জন্য বা পরিবেশে জন্য নিরাপদ করার সিস্টেম। ওদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিন গিয়ে সব দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
(জেজে/এএস/জুন ২৩, ২০২৩)