ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


শুক্রবার ২৪ মার্চ ‘বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২৩’। যক্ষ্মা রোগের ক্ষতিকর দিক বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই রোগটি নির্মূলে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করেন। যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, জীবাণু আবিষ্কারের দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্পষ্ট করেই যক্ষ্মার উত্থানের কারণ হিসেবে কোভিডকে দায়ী করেছে। সংস্থাটি বলছে, গত বছর পৃথিবীতে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগ ৩ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৪ সালের পর ২০২১ সালেই এত বেশি মানুষ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া ওই বছর ‘চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার যোগ্য’ এমন সাধারণ যক্ষ্মায় সারা পৃথিবীতে মৃত্যু হয়েছে ১৬ লাখ মানুষের। যেখানে ২০২০ সালে মৃত্যু হয় ১৫ লাখ এবং ২০১৯ সালে মৃত্যুর সংখ্যাটি ছিল ১৪ লাখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন লাখ ৬১ হাজার যক্ষ্মা রোগী রয়েছে। অপর দিকে যক্ষ্মায় বছরে প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ মারা যায়। শনাক্ত হওয়া রোগীদের ৮১ শতাংশ চিকিৎসা পায়, অবশিষ্ট ১৯ শতাংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়।এ দিকে দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই এই রোগের লক্ষণ গোপন করে যায়। একজন রিকশাচালক বা বস্তিবাসী মনে করেন, অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করলে তার উপার্জনে ক্ষতি হবে। মূলত এসব কারণে বড় একটা অংশ লক্ষণ গোপন করে আরো অসুস্থ হচ্ছে এবং অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোভিডের কারণে নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত কমে গেছে ৭ লাখ। যেখানে ২০১৯ সালে বিশ্বে নতুন যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে ৭১ লাখ, সেখানে ২০২১ সালে হয়েছে ৬৪ লাখ। সংস্থাটি বলছে, লাখ লাখ মানুষ যক্ষ্মা চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তারা চিকিৎসা করাতে অসমর্থ হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ শতাংশ যক্ষ্মা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে এক কোটি ৬ লাখ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০২১ সালে যে ১৬ লাখ মানুষ মারা গেছে যক্ষ্মায়, তাদের মধ্যে দুই লাখ ছিল এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, যক্ষ্মা বিশ্বব্যাপী ১৩ নম্বর মরণঘাতী রোগ, যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান।কিন্তু একক সংক্রামক রোগ হিসেবে দ্বিতীয় একক মরণঘাতী রোগ।জীবাণু আবিষ্কার প্রায় ২০০ বছর হলেও বিশ্ব জুড়ে যক্ষ্মা এখনও মানুষের প্রাণ কাড়ছে। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৯৬ লাখ মানুষ সক্রিয় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন; যাদের মধ্যে ১৫ লাখই মারা যান। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে ৭০ হাজার রোগী মারা যান।

স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, মারাত্মক সংক্রামক যক্ষ্মা এখনও প্রতিদিন প্রায় ৪৫০০ জনের প্রাণ কাড়ছে। এ ছাড়াও বিশ্বে ৩০ হাজার জন প্রতিদিন রোগাক্রান্ত হচ্ছেন।নতুন রোগীদের ২.২ শতাংশ ও পুরোনো রোগীদের ১৫ শতাংশই মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় প্রচলিত বিভিন্ন ওষুধই অকার্যকর হয়ে পড়ে।শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা ফুসফুসেই হয়ে থাকে। তবে যক্ষ্মা হয় না, শরীরে এরকম অঙ্গ খুব কমই আছে। ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, বৃক্ক, মস্তিষ্ক ও এর আবরণী, অন্ত্র, হাড় এমনকি ত্বকেও হতে পারে যক্ষ্মা। ফুসফুসে যক্ষ্মা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। তবে আশার কথা, এই রোগ প্রতিরোধ রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের পথ উন্মোচন করেন। তাকে স্মরণ করেই এই দিনটিতে পালন করা হয় বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। অতীতে যক্ষ্মা একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ হিসেবেই পরিচিত ছিলো। তখন বলা হতো -‘যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা’। সেই ধারণা অবশ্য এখন পাল্টেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যক্ষ্মা এখন একটি নিরাময়যোগ্য রোগ হিসেবেই স্বীকৃত। তারপরেও যক্ষ্মা এখনও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটা হুমকি হিসেবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যাবে এদেশে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এখানে দিবসটি পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।

আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন- দেশে প্রতিদিন অন্তত ৯৭৮ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এর মধ্যে ১৬ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে দৈনিক মারা যাচ্ছে ১২৯ জন। ২০২০ সালে দেশে নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিল দুই লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ জন। অবশ্য চিকিৎসায় ৯৬ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়। যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ। ‘সাম্প্রতিকসময়ে যক্ষ্মার সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা কমে এসেছে। ১৯৯০ সালের পর যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ ভাগ কমে এসেছে। দ্রুত যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার কারণে যক্ষ্মার প্রকোপ কমে আসছে। তারপরেও এখনও যক্ষ্মা সারা বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১১ সালে সারা বিশ্বে ৮৭ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। মারা যায় ১৪ লাখ। এর মধ্যে ৯৫ ভাগ মৃত্যু হয়েছে গরীব ও মধ্য আয়ের দেশে।

১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি যক্ষ্মা। একই বছর (২০১১) সারা বিশ্বে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় পাঁচ লাখ শিশু। এর মধ্যে মারা যায় ৬৪ হাজার। বাংলাদেশে ২০১৫ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় তিন লাখ ৬২ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছে ৭২ হাজার। সে হিসেবে দিনে মারা গেছে দু’শ জন। ২০১৭ সালে প্রায় ১ কোটি মানুষ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হন তার মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ মৃত্যু বরন করেন। এবং প্রায় দশ লাখ শিশু যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয় এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

সুতরাং যক্ষ্মা আমাদের জন্য এখনও চিন্তার বিষয়।সব মিলিয়ে যক্ষ্মা বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক খবর বেরিয়ে এলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত জরিপে। সেটা হলো সারাবিশ্বে সর্বাধিক যক্ষ্মা আক্রান্ত ২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সরকারীভাবেও বিনামূল্যে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও একমাত্র সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আজকের এই যক্ষ্মা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এই রোগের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করে তোলা এবং প্রতিটি চিকিৎসা পদ্ধতিকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ বর্তমানে করোনা ভাইরাস নিয়ে যেই ভাবে সারাবিশ্বে এক আতঙ্ক বিরাজ করিতেছে কারণ হলো সঠিক সিদ্ধান্তর অভাব ও সচেতনতার কারনে সমস্যা হচ্ছে, এই ভাবে প্রতিটি ভাইরাস জাতীয় রোগ গুলাকে চিকিৎসকে সঠিক লক্ষণ রোগী সচেতন হলে তাহলে আল্লাহ রহমতে সারানোও সম্ভব।

যক্ষা শব্দটা এসেছে “রাজক্ষয়” থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ হয়ে পড়েন। এর ইংরেজী শব্ধ টিউবারকুলোসিস এটি একটি বায়ু বাহিত সংক্রামক ব্যাধি। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (টিউবারকেল ব্যাসিলাস) নামক জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট রোগকে টিউবারকুলোসিস বলে। বিশ্বে যে দশ টি রোগে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান তার মধ্যে যক্ষা অন্যতম। যক্ষা একটি ভয়ানক রোগ। সাধারন এন্টিবায়োটিক ঔষধে এ রোগের ব্যাকটেরিয়া উপর কার্যকরী নয়। এইডস রোগীর অধিকাংশ মৃত্য বরন করেন যক্ষা রোগে।

যক্ষা অতি সাংঘাটিক প্রাণ নাশক ব্যাধি । এ রোগে আত্রান্ত হলে রোগী ফেকাশে,রক্তশূন্য, দুর্বল, বক্ষ সরু, কাজে কর্ম অনিহা, প্রায়ই কাশি লেগে থাকে । শরীর ক্ষয়, স্বর ভঙ্গ, বিকালে জ্বর, রাত্রে ঘর্ম, দিন দিন শরীর ওজন কমিয়ে যায়, সকালে ও রাত্রে কাশির বৃদ্ধি । কাশির সাথে পুঁজ এর মত শ্লেষ্মা । ফুসফুস হতে উজ্জ্বল বর্ণ রক্ত আসা। যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশী দেখা যায় ফুসফুসে। পিতা মাতার এ রোগ থাকলে সন্তানদেরও এ রোগ হতে পারে।

টিউবার কুলোসিস এর প্রকারভেদ

* একিউট টিউবার কুলোসিস:ইহা মানুষকে হঠাৎ আক্রমন করে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অতিদ্রুত জীর্ন শীর্ন হয়ে যায়।

* নিউমোনিক থাইসিস: এতে সাধারণত: ফুসফুস আক্রান্ত হয় এবং নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

* হেমোরেজিক থাইসিস: ফুসফুস দিয়ে রক্ত উঠে ও মুখ দিয়ে নির্গত হয়।

* ফাইব্রয়েড থাইসিস: নিউমোনিয়া, প্লুরিসি প্রভৃতি রোগের পুরাতন অবস্থায় ইহা সৃষ্টি হয়।

* স্ক্রুফুলা থাইসিস: গন্ডমালা রোগ হতে ইহা সৃষ্টি হয়।

* ল্যারিনজিয়াল থাইসিস: রোগীর কণ্ঠনারীতে গুটিকা হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

টিউবারকুলোসিস এর কারণ ও উপসর্গ

* মাইকো ব্যাকটেরিয়াম টিউবার কুলোসিস নামক জীবাণু সংক্রমনই এর মুল কারণ। দেহের প্রতিরোধ শক্তি কমে গেলেই এরা রোগ সৃষ্টি করার সুযোগ পায়।

* অনিয়মিত আহার, পুষ্টিকর খাদ্য ও ভিটিামিন যুক্ত খাদ্যের অভাব, শৃংখলবিহিন জীবন যাপনের ফলে এই রোগ সৃষ্টি হয়।

* নোংরা পরিবেশ, স্যাঁত স্যেঁতে, আলোবাতাস হীন পরিবেশ, কঠোর পরিশ্রম । খাদ্যের অভাব, ক্রমাগত দারিদ্র, অভাব অনটন, দুশ্চিন্তা, প্রভৃতি আনুষঙ্গিক কারণে এই রোগ কৃষ্টি হয়।

* বংশগত পীড়া ভোগার ইতিহাস।

* নৈতিক অবনতি, পুন:পুন: গর্ভধারণ, একপাত্রে পানাহার প্রভৃতি।

উপসর্গ

সাধারনত-তিন সপ্তাহের বেশি কাশি,জ্বর, কাশির সাথে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষার প্রধান উপসর্গ।

জটিল উপসর্গ সমূহ

* যক্ষ্মার সঙ্গে প্লুরিসির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

* জীবাণুর আক্রমনে প্লরাতে ফুটা হইয়া যায়, প্লুরায় পুঁজ হয়।

* আন্ত্রিক যক্ষ্মার সৃষ্টি হতে পারে।

* দেহের বিভিন্ন স্থানে টিউবারকল দেখা যায়।

* দেহ জীর্ণ শীর্ন, দুর্বল, মস্তিস্ক ঝিল্লীর প্রদাহ, মুখ দিয়া রক্ত উঠা, অস্ত্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।

* বুকের রোগ হতে হাত, পা, পেট, পায়ু, কিডনী, ব্রেন প্রভৃতি আক্রান্ত হতে পারে।

* পায়ুতে ফিশ্চুলা বা ভগন্দর হয়।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

১। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে গিয়া রোগ নির্ণয় করতে হবে। যক্ষ্মা রোগ নিশ্চিত হলে রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। তা সম্ভব না হলে বাড়ীতে একটা পৃথক কামরায় রোগীকে স্বতন্ত্র ভাবে রেখে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের ম্যধ্যমে চিকিৎসা করতে হবে।

* রোগীর জন্য পৃথক আসবাব পত্র, থালাবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও থানাবাসন অন্য কেহ ব্যবহার করতে পারবেনা।

* রোগী যেখানে সেখানে কফ, থুথু, শ্লেষ্মা ফেলবেনা। একটি পিকদানীতে রোগীর কফ, থুথু সংগ্রহ করতে হবে এবং বিশোধন ঔষদ দ্বারা বিশোধন করে দূরে কোথাও পুঁতিয়া ফেলতে হবে।

* কলকারখানায় আইনের দ্বারা ধূলা ও ধোঁয়া নিবারণের ব্যবস্থা করতে হবে।

* বাড়ীর ভিতরে বা বাইরে কোথাও ধুলা বা ঝুল জমিতে দিতে নাই। বাড়ীতে মাছি, তেলাপোকা, পিঁপড়ার উপদ্রব কমাইতে হবে।

* রোগীর গৃহে প্রচুর আলোবাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এমন জায়গায় বাড়ী, ঘর নির্মাণ করতে হবে যাতে সব সময় প্রচুর আলোবাতাস পাওয়া যায়।

* নিয়মিত টাটকা ও পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া উচিত। রাত্রি জাগরণ ও অতিরিক্ত পরিশ্রম বর্জন করতে হবে।

হোমিও প্রতিবিধান

রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়,তাই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর রোগের পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে আল্লাহর রহমতে হোমিও তে যক্ষা রোগ চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। অভিজ্ঞ চিকিৎসক গন প্রাথমিক ভাবে যক্ষা রোগীর জন্য যে সব মেডিসিন ব্যবহার করে থাকেন,একোনাইট, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, রাসটক্স, টিউবারকিউলিনাম, ক্যালি আয়োড, ষ্ট্যানাম, একালিফা ইন্ডিকা, ফসফরাস, ক্যালি আয়োড, আর্সেনিক এলবাম, কার্বোভেজ, ইপিকাক, সালফার সহ আরো অনেক ঔষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে, তাই যক্ষা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে অভিজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পরিশেষে বলতে চাই, যক্ষ্মা হলো একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এই রোগ বাহকের ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আক্রান্তদের কাশির মাধ্যমে বাতাসে সেই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে অন্যকে আক্রান্ত করে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন এই রোগ থেকে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।