অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত : পর্ব-২
দিলীপ চন্দ, কুয়াকাটা থেকে ফিরে : শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দির, নাম শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।
মেরিন জাদুঘর বাংলাদেশের প্রথম মেরিন জাদুঘর কুয়াকাটায় অবস্থিত। এখানে সংরক্ষিত আছে ২০০ বছরের পুরাতন নৌকা। কুয়াকাটার ঝাউবন পয়েন্টের বেলাভূমিতে একটি বিশাল নৌকা জেগে ওঠে। স্থানীয়রা এটাকে সোনার নৌকা বলত। পুরো নৌকাটা সোনালি পাত দিয়ে মোড়ানো ছিল। কথিত আছে প্রায় ২০০ বছর আগে একদল বণিক অনেকগুলো বড় নৌকা নিয়ে এসে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। নৌকাটিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রায় ৬ কি.মি. অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে নিয়ে আসা হয়। শ্রী-মঙ্গল বৌদ্ধবিহারের পাশে জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়।
কেরানি পাড়া সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানি পাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুনন। এদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আরেকটি বাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির। এ মন্দিরেই রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি ও পবিত্র কুয়া। এখান থেকে কিছু দূরে আমখোলা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি।
ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান সমুদ্র সৈকতের একেবারে কোল ঘেঁষে প্রায় ২০০ একর জায়গায় ষাটের দশকে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা নারিকেল কুঞ্জ, ঝাউ বন, গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন , পশ্চিমদিকের ফাতরার বন ও মহিপুরের রেঞ্জের বনাঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান। সমুদ্রের অব্যাহত ও অপ্রতিরোধ্য ভাঙ্গনে ইতিমধ্যেই নারিকেল কুঞ্জ অনেক খানিই বিলীন হয়েছে।
লাল কাঁকড়ার দ্বীপ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতির খাল(ক্যানেল) পার হলেই কাঁকড়ার দ্বীপ। এ জায়গায় আছে লাল কাঁকড়ার বসবাস। নির্জনতা পেলে এ জায়গার সৈকত লাল করে বেড়ায় কাঁকড়ার দল। ভ্রমণ মৌসুমে (অক্টোবর-মার্চ) কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে স্পিড বোটে যাওয়া যায় ক্র্যাব আইল্যান্ডে। লাল কাকড়ার দ্বীপের শেষ প্রান্তে রামনাবাদ চ্যানেল(পায়রা বন্দরের প্রবেশ মুখ)।
লেবুর বন কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকের শেষ প্রান্তে এই লেবুর বন। লেবুর বন থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। এক পাশে সমুদ্র আরেক পাশে তিন নদীর মোহনা, অপর পাশে উপকূলীয় বন, নদীর ওপারে দেখা যায় ফাতরার বন সব মিলিয়ে জায়গা টা অসাধারণ। বাইকে করেই ঘুরে আসতে পারবেন সহজেই। তাছাড়া এখানে কিছু সামুদ্রিক “ফিস-ফ্রাই” ও “কাঁকড়া-ফ্রাই” এর রেস্টুরেন্ট আছে। ঘুরাঘুরি করে বিকেলে বা সন্ধ্যায় লেবুর বনের এখানে মাছ/চিংড়ি/কাঁকড়া ভাজি খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন।
ফাতরার বন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে নদী পার হলেই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, এরই নাম ফাতরার বন। ইতিমধ্যে এটি ‘দ্বিতীয় সুন্দরবন ‘হিসেবে পরিচিতি ও খ্যাতি পেয়েছে। সুন্দরবন সদৃশ এই বনে আছে বন-মোরগ, কাঠ বিড়ালি, বানর আর বিভিন্ন রকম পাখির কুহুতান। এ বনে নেই কোন হিংস্র প্রাণী, কদাচিৎ বুনো শুকরের দেখা মেলে। এখানকার গাছপালা কিছুটা হলুদ বর্ণের, আর বনের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার পথটা অসম্ভব সুন্দর, বন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একসময়য় সাগরের দিকে বের হওয়া যায়। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হলে লাগবে ইঞ্জিন বোট পথে পরবে ডাকাতিয়া নদীর মোহনা (সমুদ্র ও নদী সংযোগস্থল)। সারা দিনের জন্য মাঝারি মানের একটি বোটের ভাড়া ১৫০০- ২০০০টাকা।এডভেঞ্চার প্রিয়দের এখানে আসতেই হবে।
শুঁটকি পল্লী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।
(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩)