রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : ৮০’র দশকে রৌমারীর পথে-ঘাটে মহিষের গাড়ি ছাড়া কোন যানবাহন ছিল না। শুধু মালামাল বহনের জন্য নয়; নতুন বউ আনা-নেয়ার কাজেও ব্যবহার হত এই মহিষের গাড়ি। তৎকালীন সময়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম থেকে যাবতীয় মালামাল নৌপথে এসে ঘাটে ভিড়লেই ডাক পড়ত মহিষের গাড়ির।

জানা যায়, প্রায় ৩ শতাধিক মহিষের গাড়ি নিয়ে ছিল ‘গাড়োয়ান সমিতি’ নামের একটি শক্তিশালি সংগঠন। ‘চরের জাহাজ’ নামে পরিচিত এসব মহিষের গাড়ির জনপ্রিয়তা ছিল তখন আকাশচুম্বি। দাপুটে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ অফিসার, সরকারি আমলাসহ সকলেই ছিল এখানে অসহায়। সমিতি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই চলত গোটা এলাকা। এই সমিতিকে কেন্দ্র করেই জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন প্রয়াত সুরুজ্জামান বকুল। জনশ্র“তি রয়েছে, তিনি বেঁচে থাকলে এবার সংসদ সদস্য হতেন। ২০১০ সালের ফেব্র“য়ারীতে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি।

৮৮’র ভয়াবহ বন্যায় তচনচ হয়ে যায় সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ৯০’র দশকে রৌমারী-ঢাকা সড়ক পুনসংস্কারের পর ৯৬’র দিকে তা পাকা হয়। আস্তে আস্তে চরাঞ্চলের ভেতর দিয়ে সড়ক সৃষ্টি হয় এবং চলনসই সড়কে পরিণত হয়। তখন যানবাহন বলতে ভ্যান, বাইসাইকেল ও টেম্পো চলাচল করতে শুরু করে। আরও কিছু দিন পরে শুরু হয় রৌমারী-ঢাকা বাস সার্ভিস। বিলুপ্ত হয় মহিষের গাড়ি। মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত হয় শ্যালোইঞ্জিন চালিত ভটভটি। মহিষের গাড়ির জায়গা দখল করে নেয় ভটভটি নামের এই ভয়াবহ যানটি।

গত বন্যায় চরাঞ্চলসহ গ্রামের রাস্তাঘাট, ডিসি সড়ক ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি সাধিক হয়। প্রায় শতাধিক রাস্তা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এ ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে কোন যানবাহনই চলাচলা করতে পারছে না। ফলে আবারও ফিরে আসে মহিষের গাড়ি। এর সাথে ফিরে আসে রৌমারীর ঐতিহ্য। খুলে যায় কত উত্থান আর পতন কাহিনীর বন্ধ দরোজা। বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে চরবাসী তখন পিছনের দিকে ফিরে খুঁজছে তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। হেরে যাচ্ছে যেন ডিজিটাল বাংলার স্বপ্ন দেখেও।

(আরআইএস/এএস/অক্টোবর ১৯, ২০১৪)