ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের ৭শ খেঁজুর গাছ থেকে
দিনে ১ হাজার লিটার রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর এলাকায় মোহন ইক্ষু খামারের সাথেই ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের খেঁজুর বাগান। শীত আসলেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বাগানটি লিজ নিয়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও সেই রস দিয়ে গুড় তৈরির কাজ শুরু করেছেন গাছিরা। প্রতিদিন এই বাগানের সাত শত গাছ থেকে প্রায় এক হাজার লিটার খেঁজুরের রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা।
দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত গাছে হাড়ি টাঙ্গান গাছিরা। গাছের ফোটাফোটা রসে পূর্ণ হয় হাড়ি। সেই রস ভর্তি হাড়ি নামিয়ে চুলোর উপরে বিশেষ বড় টিনের কড়াইয়ে ঢেলে সেই রসকে আগুনে জ্বালিয়ে ঘন করার পর কড়াই চুলো থেকে নামিয়ে সেটি ঘুটনির সাহায্যে কিছুক্ষণ ঘুটা হয়। ঘুটার পরে সেই ঘন তরল গুড় ছোট ছোট মাটির খাচে ঢালা হয়। কিছুক্ষণ পর সেগুলো জমাট বেঁধে ঢিকা গুড়ে পরিণত হয়। এভাবেই দিনভর চলতে থাকে গাছিদের কর্মযজ্ঞ। আর প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন কর্মযজ্ঞ দেখতে, খেজুরের রস ও গুড় খেতে এবং কিনতে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রতিদিন দুরদূরান্তের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন শতশত দর্শনার্থী ও ক্রেতারা।
স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানকার গুড় ও রস খুবই সুস্বাদু। তাই দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে আসেন রস ও গুড় কিনতে। দিনাজপুর থেকে লিটন আহম্মেদ এসেছেন গুড় কিনতে। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করি। সেখানকার বস আমাকে খেঁজুরের গুড় নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই আমি এখানে গুড় কিনতে এসেছি।
নাটোর জেলার লালপুর থেকে খেঁজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির করার জন্য এসেছেন আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে গাছের ছাল কেঁটে হাড়ি টাঙ্গানোর কাজ দুপুর পর্যন্ত চলে। আর এই হাড়িতে ফোটায় ফোটায় রস জমতে থাকে। পরে সেই হাড়ি গুলো রাত ৩টা থেকে গাছ থেকে নামানো হয়। হাড়ি ভর্তি সেই রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এখানে দুই প্রকার গুড় তৈরি করা হয়। একটি স্থানীয় ভাষায় ঢিকা গুড় ও লালি গুড় যেটিকে তরল গুড় বলা হয়। এসব প্রতি কেজি ২৫০ দরে এবং খেঁজুরের রস প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে। আর গতবছর এই বাগান রাজশাহী জেলার গাছিরা লিজ নিয়েছিলেন মাত্র ৪০ হাজার টাকায়। কিন্তু এবার বাগানটি সুগার মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন স্থানীয় দুই যুবক।
বর্তমানে শীত কম হওয়ায় গাছ থেকে রস কম বের হচ্ছে। বর্তমানে সাত শত গাছ থেকে দিনে ১ হাজার লিটার রস বের হচ্ছে। শীত বৃদ্ধি পেলে এই বাগান থেকে দিনে ৩ হাজার লিটার রস সংগ্রহের আশা করছেন বলে জানান বাগান লিজকারি মোঃ আল আমীন। এছাড়াও তিনি বলেন, এখানে নির্ভেজালভাবে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। তাই এখান থেকে প্রচুর মানুষ রস ও গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ভোর রাত থেকে সারা দিনে অনেক মানুষের ভীড় হয়। মানুষের এমন ভীড় থেকে আমাদের অনেক ভালো লাগে ও আমরা আনন্দিত।
বর্তমানে এই খেঁজুর বাগানটি দর্শনীয় জায়গায় পরিণত হচ্ছে। এটিকে বিকশিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান।
(এফআর/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২২)