রংপুরে মামলায় জড়িয়ে নাবালক ভাতিজার সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা
রিয়াজুল রিয়াজ, রংপুর থেকে ফিরে : একে ঘরের শত্রু বিভীষণ বলবেন নাকি রক্ষক হয়ে ভক্ষক বলবেন। বলছি পরিবারের ভয়ে বাবা হারানো এক স্কুল ছাত্রের কথা। উচ্চ ও নিম্ন আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পত্তি বন্টন না করে রংপুর মহানগরীতে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের এক ছেলে ও জেলা স্কুলে অধ্যয়নরত বাবা হারানো ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রের সম্পত্তি ও সম্পদ হাতিয়ে নিতে, হয়রানি মুলক মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে আপন কাকা ও জ্যাঠার বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর নগরীর ২০নং ওয়ার্ডের পাকপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় ওই নাবালক ভুক্তভোগীর মা রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ ও সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতকরণসহ আদালতের রায় বাস্তবায়নে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলেও নাবালক ও তার বিধবা মা সম্পত্তি ও সম্পদ উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে ওই অসহায় বিধবা পরিবারটি নাবালক ছেলে সন্তান নিয়ে মানবেতর জিবন যাপন করছে। অপরদিকে ঘরের শত্রু বিভীষনের ভয়ে অভিভাবকহীন পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই অসহায় পরিবারটি।
অভিযোগ জানা যায়, পাকপাড়া এলাকার প্রয়াত দীনেশ চন্দ্র রায়ের রেখে যাওয়া সাড়ে ৮ শতক বাস্তুভিটার সম্পত্তি সমবণ্টন না করে ভোগদখল করে আসছিলেন তার ছেলে জ্যোতি ভুষণ রায় বাদল, কিশোরী মোহন রায় বাবলু ও বিকাশ চন্দ্র রায়।
এর মধ্যে ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারিতে জ্যোতি ভুষণ রায় বাদল মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকে কিশোরী মোহন রায় বাবলু ও বিকাশ চন্দ্র রায় দুইভাই মিলে মৃত জ্যোতি ভুষণ রায় বাদলের অংশের সম্পত্তি তার নাবালক সন্তান দিব্য রায় প্রদীপকে বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মৃত জ্যোতি ভুষন রায় বাদলের স্ত্রী সুচিত্রা রানী রায়কে বিবাদী করে কিশোরী মোহন রায় বাবলু ও বিকাশ চন্দ্র রায় রংপুর বিজ্ঞ আদালতে একটি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত তাদের কাগজপত্র ভুয়া বলে গণ্য করে মামলা খারিজ করে দেন। নাবালক ভাতিজার সম্পত্তি ও সম্পদ লুফে নিতে প্রতিপক্ষ কিশোরী মোহন রায় বাবলু ও বিকাশ চন্দ্র রায় নানা ভাবে হয়রানী করে আসছে ওই অসহায় পবিারটিকে।
মহামান্য হাইকোর্টও আপিল শুনানি করে মৃত জ্যোতি ভুষণ রায় বাদলের স্ত্রী সুচিত্রা রানীর পক্ষে রায় প্রদান করেন। এরপরেও নাবালক ভাতিজার সম্পত্তি ছেড়ে না দিয়ে নতুন করে একটি বাটোয়ারা মামলাসহ ১৪৪ ধারা জারির মামলা দায়ের করেন প্রভাবশালী ওই প্রতিপক্ষ। এদিকে নিম্ন থেকে উচ্চ আদালতে দুই-দুইবার আদালতের রায় মৃত জ্যোতি ভুষণ বাদলের পরিবারের পক্ষে গেলেও তার ভাইয়েরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বিভিন্ন ভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে সেই সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো এমনকি হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন ওই প্রতিপক্ষ। এতে অভিভাবকহীন এই পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ভূক্তভোগী সুচিত্রা রানী বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমার শ্বশুরের কোন সম্পত্তি সুষম বণ্টন হয় নাই। আমার স্বামীর ভাগের অংশের জমি আমার ভাসুর ও দেবরের নিকট বুঝে নিতে গেলে তারা বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করেন। অপকৌশলে তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে রংপুর বিজ্ঞ আদালতে মামলাও দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় বিজ্ঞ আদালত আমার পক্ষে রায় ঘোষণা করলেও অদ্যবধি তারা আমার স্বর্গীয় স্বামীর প্রাপ্য সম্পত্তি দখলে রেখেছেন। আমি ও আমার পৃত্রিহারা নাবালক সন্তানদের নিয়ে ওই জমিতে গেলে তারা আমাকেসহ আমার নাবালক ছেলেকে ওই ভিটায় উঠতে না দিয়ে বরং উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। আ এব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় অভিযোগসহ একটি জিডি করেছি।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিশোরী মোহন রায় বাবলু বলেন, আমরা বাবার রেখে যাওয়া পুরো সম্পত্তির সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পত্তি বন্টনের জন্য বাটোয়ারা মামলা করেছি, বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালত যা রায় দিবে আমরা তা মেনে নিবো।
(আর/এসপি/নভেম্বর ২৮, ২০২২)