হবিগঞ্জে ভুল অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ৩ লাখ টাকায় রফাদফা
তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ শহরের নতুন বাস স্টান্ড এলাকায় ফয়েজ জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালে ভুল অপারেশনে নারীর মৃত্যু ঘটনায় ৩ লাখ টাকায় রফাদফা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে, গত ১১ নভেম্বর পিত্ততলীর অপারেশন করতে গিয়ে আয়লা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু ঘটে। আয়লা বেগম হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি ইউনিয়নের বগুলাখাল এলাকার ইয়াদ আলীর স্ত্রী।
নিহত আয়লা বেগমের কন্যা লুৎফা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে পিত্ততলীর সমস্যায় ভুগছিলেন আয়লা বেগম। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে হাসপাতালের গেইটে থাকা দালাল মারফতে যান শহরের নতুন বাস স্টান্ড এলাকার ফায়েজ জেনারেল হাসপাতালে। টুকটাক চিকিৎসার পর গত ১১ নভেম্বর তার মাকে পিত্ততলীর অপারেশনের জন্য ফায়েজ জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। ওইদিন বিকেল ৫টায় সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান রানা আয়লা বেগমের অপারেশন করেন। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ৮টায় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় আয়লা বেগমের স্বজনরা দেখা করতে চাইলেও স্বজনদের সাথে দেখা না করিয়ে দ্রুত গতিতে সিলেট প্রেরন করতে হবে বলে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়া হয়। পরে দেখা যায় তিনি মারা গেছেন তার নাক-মূখ দিয়ে রক্ত রেব হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিলে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ।
এদিকে, ঘটনাটি নিয়ে রীতিমত হুলস্থুল শুরু হলে তদন্তে নামে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঘটনার পরদিন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হক। এ সময় ওই হাসপাতালকে বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার ছাড়া কোন সার্জারী না করার নির্দেশ দেন তিনি।
সুত্র জানায়, সাধারণত একজন সার্জনের পাশাপাশি আরও একজন এমবিবিএস ডাক্তার, অ্যানেসথেসিয়া বা অজ্ঞান করার জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ডিগ্রিধারী বা প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নূন্যতম প্রশিক্ষিত দুজন ওটি নার্স এবং ওটি বয়ের সমম্বয়ে হয়ে থাকে অপারেশন। অপারেশন থিয়েটারে যিনি অ্যানেসথেসিয়া বা অজ্ঞান করবেন বেশী গুরুত্ব থাকে বেশী। মূলত রোগীকে পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করেই অ্যানেসথেসিয়া বা অজ্ঞান করতে হয়। রোগীর অন্য কোনো রোগ আছে কি না, রক্তচাপ, হাইপারটেনশন বা তার কোনো কার্ডিয়াক সমস্যা আছে কি না বা তার অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না এগুলো দেখতে হবে।
এ ব্যাপারে ফায়েজ জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মকসুদ আলী জয়ধরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যেহেতু একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে রিচি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিষয়টি আপোষে মিমাংসা ও ক্ষতিপূরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে রোগীর স্বজনরা কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন না মর্মে একটি লিখিতও নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
(টিএইচ/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০২২)