ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নজিরবিহীন সুষ্ঠু নির্বাচন
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বিপুল ভোটে নির্বাচিত
গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নির্বাচন নিয়ে সব ধরণের শঙ্কা, উৎকণ্ঠা কাটিয়ে ও সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় স্মরণকালের একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিদায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম এমএসসি।
বিজয়ী চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার তাঁকে বিজয়ী করায় সকল ভোটারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এদিকে এই বহুল আলোচিত জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে গোটা জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার কথা বলা হলেও, শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন কঠোর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনটি অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
নির্বাচন চলাকালে সরজমিনে জেলার নবীনগর উপজেলা কেন্দ্রে (৮ নং কেন্দ্রে) ঘুরে দেখা গেছে, নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থাপিত ভোট কেন্দ্রের আশপাশসহ উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক গুলোতেও বিপুল পরিমাণ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কড়াভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। নির্বাচন চলাকালে দুপুর ২টা পর্যন্ত সদরের আদালত সড়ক, উপজেলা পরিষদ সড়ক ও সালাম সড়কসহ ভোট কেন্দ্রের আশপাশের সব দোকানপাট ও সব ধরণের যান চলাচলও সম্পূর্ণ বন্ধ ছিলো। উপজেলা পরিষদ সড়কের তহশিল মোড়ে পুলিশী ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়। শুধুমাত্র প্রার্থী, ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কাউকেই কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, 'মূলত নির্বাচনটিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থেই আমাদের অনুরোধে কেন্দ্রের আশপাশের সড়কে থাকা সব ব্যবসায়ীবৃন্দ দুপুর ২টা পর্যন্ত সব ধরণের দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন।'
নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোশারফ হোসাইনকেও নির্বাচন চলাকালে কঠোর মনোভাব নিঢে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
এদিকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার ঘন্টা দেড়েক পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহ্গীর আলম ও পুলিশ সুপার মো. আনিছুর রহমান সরজমিনে ভোট গ্রহণের কার্যক্রম পরিদর্শন করতে নবীনগরে ছুটে আসেন। এসময় ভোট গ্রহণের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তাঁরা সাংবাদিকদের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
জেলা পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে- জেলার ৯টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে ৪ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৩৩ জন ইন্সপেক্টর, ৫৮ জন সাব-ইন্সপেক্টর, ৪৭জন সহকারী সাব-ইন্সেপক্টর এবং ২১৭ জন কনষ্টেবল দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।
এ ছাড়া প্রত্যেকটি কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ফোর্স মোতায়েন করা ছাড়াও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন ছিলো গোটা জেলায়। জেলার কসবা, নবীনগর ও সরাইল কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে ব্যাটালিয়ন পুলিশও মোতায়েন ছিলো। এর বাইরেও নবীনগর কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, 'নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যার কারণে ইনশাল্লাহ কোন ধরণের বিশৃঙখলা ছাড়াই সকলের সহযোগিতায় অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আলোচিত এ নির্বাচনটি ভালোভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছি। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা এ বহুল আলোচিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ৫৮ জন প্রার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৩ জন ও সংরক্ষিত নারী পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জেলার ১০০ টি ইউনিয়ন, ৯টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা এ নির্বাচনের ভোটার ছিলেন। যার মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ১৩৯৬ জন। এরমধ্যে নবীনগর উপজেলায় মোট ২১ টি ইউনিয়ন, ১টি উপজেলা ও ১টি পৌরসভার মোট ২৮৭ জন জনপ্রতিনিধি তাঁদের ভোট প্রদান করেন।
এদিকে এ নির্বাচনে জেলার নবীনগর (কেন্দ্র নং-৮) কেন্দ্র থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন ও সংরক্ষিত নারী আসনে (নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর ও আখাউড়া) সনি আক্তার সূচি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
(জিডি/এসপি/অক্টোবর ১৭, ২০২২)