চুরির আখড়ায় পরিণত সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল, কর্তৃপক্ষ নিরব!
ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রায়শ টাকা চুরি, মোবাইল চুরি এবং শিশু চুরির মত ঘটনাও ঘটছে। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে কর্তব্যরত আয়াদের বখশিস বিল নেওয়ার বিষয়ে। টাকা না দিলে আটকে দেওয়া হয় ট্রলি, স্ট্রেচার। সেবা নিতে আসা রোগীরা পড়ছে ভোগান্তিতে। এতে করে একদিকে মানসিক অন্যদিকে অর্থনৈতিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। এসব নানা সমস্যার মধ্যেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নিরুপায় রোগীদের। এতে করে প্রশ্ন উঠছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারির দুর্বলতার বিষয়।
কয়েকদিন যাবত সরেজমিনে বেশ কয়েজন ভুক্তভোগীদের সাথে যোগাযোগ করলে মুখোমুখি হই চিকিৎসা নিতে আসা সাকিব শাকিল এর সাথে। শাকিল জানান, কিছুদিন আগে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে ভর্তি হই ৫ তলার মহিলা ওয়ার্ডে। সেখান থেকে ব্যাগে রাখা ৫ হাজার টাকা চুরি হয়। সেখানে দেখলাম সিসি ক্যামেরা আছে। পরে তত্বাবধায়ক এর রুমে যোগাযোগ করলে সেখানে দায়িত্বরত পিয়ন জানালেন , কোনও লাভ হবে না, স্যার এগুলো দেখেন না। প্রশ্ন নিত্যদিন এই রকম ঘটনা ঘটছে কিন্ত হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ নিরব কেন?
শাহ আলম বলেন, আমার স্ত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার কাছ থেকে মোবাইল চুরি হয়ে যায়। আমার স্ত্রীর ধারনা মোবাইলটি হাসপাতালের একটা মহিলা নিয়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয় মামুন সরকার জানান, বেশ কিছু দিন আগে পেগনেন্টের রোগীকে জরুরি ভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসি। স্ট্রেচারে করে জরুরিভাবে ওয়ার্ডে নেয়া হয়। নেওয়ার পরেই স্ট্রেচারম্যান টাকা দাবি করে। কি জন্য টাকা জিজ্ঞেসা করতেই জানাল, নিচ থেকে নিয়ে আসলাম তার জন্য বখশিস।
এবিষয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহবায়ক নব কুমার কর্মকার বলেন, অনিয়মটা চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য- সেবায়ও বাদ নেই। মানুষ মনে করে যে সেবার খাতগুলোতে যখন যাব ডাক্তার ও নার্সদের কাছে সঠিক সেবা পাবো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে সেবার মান নিম্নমুখী। বিশেষ করে সাধারণ ও গরিব মানুষ হাসপাতাল সিট পাচ্ছে না, বারান্দায় শুয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ সেখানে নিরাপত্তার অভাব আছে, রোগীদের নিরাপত্তা নাই। সদর হাসপাতালে ছোট-খাটো মাফিয়া চক্র গড়ে উঠছে৷ যারা সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। মাফিয়া চক্রকে দেখা যাবে কোন না কোনভাবে এখানকার স্থানীয় বা প্রভাবশালীদের কেউ। এতে কাজের যে স্বাভাবিক গতি তা নষ্ট হচ্ছে। মাঝে মাঝেই চুরি হচ্ছে, হাসপাতাল প্রশাসনের কোন পদক্ষেপের ফল কার্যত দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি বুঝে নিতে হবে হাসপাতালের মধ্যেই ভুত আছে?
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, এখানে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ থাকে তো, এই জন্য মাঝে মাঝে মোবাইল ও টাকা চুরি ঘটনা ঘটে। আমরা বেশ কয়েক জনকে ধরে পুলিশেও দিয়েছি।বাচ্চা চুরি অনেক দিন আগে ঘটেছিল। তবে এগুলো পুলিশ প্রশাসনের দেখার দায়িত্ব আমাদের না। আর আয়া বা হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সেবার বিনিময় বখশি নেওয়ার সুযোগ নেই। এই বিষয় কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(আই/এসপি/জুন ১২, ২০২২)