ধ্বংসের পথে সিরাজগঞ্জের সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্প
ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : অস্থিতীশীল বাজার ব্যবস্থা, পোল্ট্রি খাদ্য, ঔষধ ও বাচ্চার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি, অজ্ঞাত রোগের আক্রমন, অপরদিকে উৎপাদিত মুরগি ও ডিমের দাম কম হওয়ায় ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি শিল্প। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার প্রায় ৬০ ভাগ খামার। বেকার হয়ে পড়ছে এই শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার পরিবার। এ অবস্থা চলতে থাকলে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা।
বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে গড়ে ওঠা পোল্ট্রি শিল্প কয়েক বছর আগেও ছিল অত্যান্ত লাভজনক একটি শিল্প। স্বল্পপূজির এই শিল্পে উৎসাহি হয়ে ঊঠেছিল শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবকেরা। সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার পোল্ট্রি খামার। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বেকার যুবকদের। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পুর্নই ভিন্ন। সরকারি নজরদারির অভাবে গত কয়েক বছরে এ শিল্পের বাজার হয়ে পড়েছে অস্থিতিশীল। পোল্ট্রি খাদ্যে, বাচ্চা ও ঔষুধের মুল্য বেড়েছে দফায় দফায়। কিন্তু সে অনুপাতে উৎপাদিত ডিম ও মুরগির দাম না বাড়ায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের। অধিকাংশ খামারিরা লোকসান দিয়ে তাদের পূজি হারিয়ে ঝনগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতিবস্তা মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েছে মানভেদে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা। বর্তমানে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা ব্রয়লার খাদ্য ৩ হাজার থেকে ৩২শ, সোনালি খাদ্য ২৬ থেকে ২৮শ ও লেয়ার খাদ্য ২৫ থেকে ২৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদিত ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি ও সোনালী মুরগি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। পোল্ট্রির খাদ্যের দাম একবার বাড়লে তা আর কমছে না, কিন্তু মুরগি বা ডিমের দাম এক সপ্তাহ বাড়লে কমছে পরের সপ্তাহেই। এর উপর যোগ হয়েছে ফাউল টাইফয়েড নামক এক নতুন রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে একদিনেই মারা যাচ্ছে খামারের শত শত মুরগি।
বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলায় ২৬৫৭টি নিবন্ধিত খামারে রয়েছে প্রায় ৪,৯৪,২৫৯টি মুরগি, অনিবন্ধিত খামার ও খামারে থাকা মুরগির সংখ্যা এর প্রায় দ্বিগুন। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার আরো আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন এমনটি আশা করছেন এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
খামারের শ্রমিক আরিফ বলেন, বেকার ছিলাম, কোন চাকুরি বা কাজ ছিল না। খামারে কর্মস্থান হয়েছে আমার। এই খামারে বেতন দিয়ে চলে আমার পরিবার৷
সব কিছুর দাম বেশি, এত করে খামারের মালিকেরা পড়ছে মহাবিপদে আমাদের বেতন দিতে হয়, তাদেরও চলতে হয়। তবে এই ভাবে চললে খামারিরা পোল্ট্রি ব্যবসায় থেকে দুরে চলে আসবে। এতে আমরা বেকার হয়ে পরবো।
পোল্ট্রি খামারি হেলাল বলেন, খাদ্যের দাম বেশি বর্তমান, ঔষধের দাম বেশি, চিকিৎসার খরচ বেশি, সব কিছু দাম বেশি। ডিমের দাম বাড়লে আবার কমে যায়। ঔষধের দাম বাড়লে আর কমে না। এতে আমার খামারিরা লোকসানের মুখে আছি। নতুন একটা রোগ ফাউল টাইফয়েড হয়েছে যা ব্যয় বহুল। জেলা প্রাণীসম্পদকে বার বার বলার পরেও কোন পদক্ষেপ নেয় না।
মোস্তাফা বলেন, বর্তমানে পোল্ট্রি খামারিদের অবস্থা খুবই খারাপ, যারা পোল্ট্রি খামার করতেছে বাচ্চার দাম খাদ্যের দাম অত্যাধি বেশি যা বলার মত না । অন্যদিকে মুরগী উৎপাদন করে মাংসের দাম ও ডিমের দাম বাজারে কোন সম্মনয় নাই।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, যার প্রাণ আছে তার অসুখ হবেই এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা মাঝে মাঝেই ডিকা কার্যক্রম চালাই। যা খুবই সূলভ মূল্যে। পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, খামারিদের সরকারিভাবে প্রনোদনা প্রদান ও বাজার তদারকিরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
(আইএইচ/এএস/জুন ০৫, ২০২২)