কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও এহসান সোসাইটি
মাগুরা প্রতিনিধি:আমরা গরীব মানুষ। ধর্মের দোহায় দিয়ে ব্যবসা শুরু করে আমাদের আমানতের টাকা মেরে ওরা বড়লোক হতে পারবে না। আল্লাহ ওদের বিচার করবে। প্রলাপ করতে-করতে কথাগুলো বলছিলেন মাগুরা সদর উপজেলার কাপাসাটি গ্রামের রীনা খাতুন (৪২) যিনি মাগুরা- শালিখা অঞ্চলের এহসান সোসাইটি নামের এক ভুঁইফোঁড় এনজিওর গ্রাহক।
তিনি বুধবার এহসান সোসাইটির কার্যালয়ের সামনে প্রলাপ করতে-করতে এসব কথা বলেন। শুধু রীনা খাতুনই নয় ,এভাবে উপস্থিত শতাধিক গ্রাহক একই অভিযোগ তুলে ধরেন।
মাগুরা সদর ও শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক সদস্যের জামানতের কয়েক কোটি টাকা লুটে নিয়ে চম্পট দিয়েছে শালিখা উপজেলার এহসান সোসাইটি নামের একটি ভুঁইফোঁড় এনজিও। গচ্ছিত টাকা ফেরতের দাবিতে সদস্যরা বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়েও কোন ফল না পেয়ে আল্লাহর ওপর বিচার ন্যাস্ত করেন।
বুধবার দুপুরে শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়াস্থ এহসান সোসাইটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে অফিস বন্ধ। শতাধিক গ্রাহক অফিস সম্মুখে বসে আছে। তাদের সাথে কথা বলে জানাযায় ধর্মীয় দোহায় দিয়ে ২০০১ সালে এ প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভব হয়। ধর্মের দোহায় দিয়ে মাগুরা জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষকে ৫০ হাজার টাকার জামানতে ৮ বছরে দ্বিগুন লভ্যাংশের লোভ দেখিয়ে সহস্রাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কাপাসাটি গ্রামের মোহিত, ফজলুর রহমান, আইয়ুব আলী,শিমুল বিশ্বাস, ছুটু বিবি, রীনা খাতুন, শারমিন খাতুন, কাপালিডাঙ্গা গ্রামের রজব আলী, সিরাজ হোসেন, শাহাত বিশ্বাস,শাহিনুর,আমিনুর রহমান,দরিলক্ষীপুর গ্রামের তারিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আছাদ,আব্দুল্লাহসহ আরও অনেকে জানান। তারা আরও জানায় প্রতি গ্রাহকের মাসিক কিস্তি ৫শ ও ১ হাজার টাকা হারে ৮ বছরের মেয়াদ পূর্ন হয়েও এক বছর অতিবাহিত হলেও জামানত ও মুনাফার টাকা না পেয়ে নিরূপায় হয়ে তারা অফিস ঘেরাও করে। এ মেয়াদ উর্ত্তীন গ্রাহকের সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশী হবে।শতাধিক গ্রাহক শালিখার এ ভুুইফোঁড় প্রতিষ্ঠান এহসান সোসাইটি অফিস ঘেরাও করে ম্যানেজারকে আটকে টাকা ফেরতের জন্য বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ভাংচুর করার চেষ্টা চালায়। এর পর যুবলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম এর সহযোগিতায় ম্যানেজার মোঃ জাহিদুল ইসলামকে শালিখা থানায় সোপর্দ করে। এ সময় শালিখা থানা অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ গ্রাহকদের আশস্ত করে বলেন গ্রাহকরা যাতে তাদের টাকা ফেরত পেতে পারে সে ব্যাপারে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। উক্ত এহসান সোসাইটি নামের এই সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে শালিখা ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন গ্রামে সাধারন মানুষের নিকট থেকে লোভনীয় প্রস্তাবে প্রায় দেড় কোটি টাকা আমানত গ্রহন করে। প্রতি মাসে এক লাখ টাকায় ১৭শ টাকা অথবা আট বছরে দ্বিগুন টাকা দেয়ার কথা বলে এসব টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু বর্তমানে সংস্থাটি গ্রাহকদের টাকা দিতে নানা তালবাহানা চালালে গ্রাহকদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে এহসান সোসাইটির পরিচালনা পরিষদের কর্মকর্তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে পাওয়া যায় নাই। কাপাসহাটি গ্রামের গ্রাহক মুহিত বলেন আমি ৫লক্ষ টাকা জমা রেখেছি মাঠ কর্মী আঃ হাই এর মাধ্যমে। কিন্তু টাকা ফেরত চাইলে নানান তালবাহানা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আল্লা মাবুদই জানেন আমাদের ভাগ্যে কি আছে। উপস্থিত গ্রাহকরা প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
(ডিসি/এসসি/সেপ্টেম্বর২৬,২০১৪)