তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে গান, আবৃত্তি, নৃত্য ও যাত্র মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ১৭ মার্চ রাত ৮ টা থেকে গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি অডিটোরিয়ামে গভীর রাত পর্যন্ত শিল্পীরা গান, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশন করেন। রাত সাড়ে ১০ টায় শুরু হয় যাত্রাপাল ।

সন্ধ্যায় সেখানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এহিয়া খালেদ সাদী সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গানের সাথে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একঝাক তরুন নৃত্য শিল্পী মনমুগ্ধকর সমবেত নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা করে। পরে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত শিল্পীরা। মাঝে গোপালগঞ্জে শিশুরা পরিবেশন করে নৃত্য ও সংগীত। এছাড়া ঢাকার আবৃত্তিকাররা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত বাংলার স্থানীয় সংস্কৃতি গুলোকে তুলে ধরা হয়। সেখানে পাহাড়, সমতল, সমুদ্র, চা-বাগান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিসহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির তথা বাঙ্গালীর হাজার বছরের সংস্কৃতিকে পরিবেশন করা হয়। আকর্ষনীয় এ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান গোপালগঞ্জ বাসীকে ব্যাপক বিনোদন দিয়েছে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মঞ্চায়ন করা হয় যাত্রাপাল ‘নিঃসঙ্গ কারাগারে’। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের লালপুর কারাগারে নেয়া হয়। ১৯৭২ সালের জানুয়ারীতে দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত কারাগারেই কাটে বঙ্গবন্ধুর নিঃসঙ্গ সময়। এ প্রেক্ষাপটেই যাত্রপালা রচিত হয়েছে। সেখানে তাঁর ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। বিভিন্ন কাগজে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর নেয়ার জন্য সেনা কর্মকর্তারা চাপ প্রয়োগ করেন। কোন চাপের কাছেই তিনি মাথা নত করেন নি। সেখানে তাকে দেয়া হত কাকর ও পোকা মিশ্রিত ভাত। জেলে নিজের কাপড় নিজে কাচতেন। কাপড় কাচা সাবান দিয়ে গোসল করতেন। কারাগারে পাকিস্তানী শাসক বাহিনী প্রহসনের বিচার বসায়।

আদালতে বঙ্গবন্ধু আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে বক্তব্য দেন, তাতেই পাক শাসকদের ভয় ধরে যায়। ওই আদালত অবশেষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নির্দেশে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়। মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনা। আমার লাশ টা বাঙ্গালীদের কাছে পৌছে দিও। লালপুর জেলা থেকে তাকে ওয়ালী জেলে নেয়া হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর জন্য করব খোড়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দিতে দেরি হওয়ায় তাকে কমান্ডো দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে পাকি শাসকরা । পরে ৭১ এর ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক আইন প্রধান প্রশাসক জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ স্বাধীনের কথা জানান। এরপর ৭২ এর ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এ আয়োজন করেছি। এখান থেকে মানুষকে নির্মল আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধুর অজানা অধ্যয় নিয়ে যাত্র সঞ্চায়ন করেছি। এ যাত্রপালায় বঙ্গবন্ধুর সহসিকতাকে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে।

(টিকেবি/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২২)