স্টাফ রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক শ্রমমান উন্নয়নে পোশাকের ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। খুচরা পোশাক বিক্রেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম যুক্তরাজ্য ছাপিয়ে পুরো ইউরোপ জুড়ে। এটি বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

স্বল্পমূল্যে ভালমানের পোশাক বিক্রির সুনাম রয়েছে প্রাইমার্কের। প্রাইমার্ক থেকে ক্রেতারা মেইড ইন বাংলাদেশ স্টিকার লাগানো ব্র্যান্ডের পোশাক কিনে থাকেন। কারণ তাদের অধিকাংশ পণ্য বাংলাদেশ থেকে নেয়া।

ইউরোপের ক্রেতারা ৩০-৩৫ ডলার খরচ করে প্রাইমার্ক থেকে কিনে নেয় পছন্দের টি-শার্ট, ট্রাউজার, শর্টস, জ্যাকেট, জার্সি, পুলওভার এবং কার্ডিগানসহ বিভিন্ন গার্মেন্ট পণ্য। আর বাংলাদেশের পোশাক মালিকরা পাচ্ছে মাত্র ৫ ডলার। অর্থাৎ যে দামে পোশাক কেনা হচ্ছে তার চেয়ে ৬-৭ গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে এসব তৈরি পোশাক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর খুচরা মূল্যের সঙ্গে আমদানিমূল্যের সমন্বয় করা এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরী। তাঁরা বলছেন এটা করা গেলে পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। আর এতেই শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে পারবেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও আবার নতুন করে উঠে এসেছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার খবর। তারাও বাংলাদেশের শ্রমমান উন্নয়নে পোশাকের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

জানা গেছে, রানা প্লাজা ধস এবং তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পর ক্রেতাদের মায়াকান্না দেখেছে পুরো বিশ্ব। এ খাত উন্নয়ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার হাজারো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের এক বছর পার হলেও ক্রেতারা প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান করেনি। বরং এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক না নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বহুবার।

বিভিন্ন অজুহাতে ইতোমধ্যে পোশাকের দাম কমানো হয়েছে ৩০-৪০ সেন্ট পর্যন্ত। অথচ গত পাঁচ বছরে পোশাক শিল্পে মজুরি বাড়ানো হয়েছে ২১৯ শতাংশ। এই সময়ে ১৭৬২ টাকা থেকে বেতন বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৩০০ টাকা।

দি গার্ডিয়ান পোশাকের মূল্য বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলছে, বাংলাদেশের শ্রমমান উন্নয়নে তৈরি পোশাকের দাম বাড়াতে হবে। ক্রেতারা স্থানীয় মার্কেটে যে দামে পোশাক বিক্রি করছে তার চেয়ে কয়েকগুণ কম দামে আমদানি করছে। এটার মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।

এছাড়া রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত ছাড়ের কথা বলেছে গার্ডিয়ান। তারা বলছে প্রাইমার্ক বাংলাদেশের বড় খুচরা ক্রেতা। তাদের পোশাক রানা প্লাজায় তৈরি হতো। অথচ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান করেনি।

দি ডিপ্লোম্যাট তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সস্তায় টি-শার্ট দেয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশেরই রয়েছে। এ শিল্প খাতে নারী শ্রমিকরা যাতে কাজ না করতে পারে সেলক্ষ্যে দেশটির ইসলামী মৌলবাদী শক্তি হেফাজতে ইসলাম গত বছর লংমার্চ করেছে। এত সবের পরও বাংলাদেশের পোশাক খাত এগিয়ে যাচ্ছে।

(ওএস/এটি/এপ্রিল ২৫, ২০১৪)