২৫ এপ্রিল, ১৯৭১
‘প্রচন্ড লড়াই শেষে পাকবাহিনী বরিশাল শহর দখল করে নেয়’
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : দশজন মার্কিন সিনেটর ওয়াল্টার মন্ডেল, এডওয়ার্ড মাস্কি, হিউবার্ট হামফ্রে, বার্চ বে, জর্জ ম্যাকগভার্ন, ফ্রেড হ্যারিস, হ্যারল্ড হিউস, উইলিয়াম প্রক্সমায়ার, টমাস এগ্রেটন ও ক্লিফোর্ড কেস এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তান সরকার যতদিন না বাংলাদেশের জন্য আপৎকালীন ভিত্তিতে ত্রান কাজের ব্যবস্থা করবে এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে সেখানে কাজ করতে দেবে, ততদিন পাকিস্তানকে সাহায্যদাতা পাশ্চাত্য দেশসমূহ ও জাতিসংঘের উচিত তাদের সমস্ত বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়া।
তৃতীয় বেঙ্গলের যোদ্ধাগণ পশ্চিম-দিনাজপুরের কামারপাড়া স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে।
পাকবাহিনী বরিশালের ওপর তিনদিক থেকে আক্রমণ চালায়। পাকসেনাদের একটি দল মলাদির দিক থেকে শেলিং করতে করতে, এবং অন্য দুইটি দল খুলনা ও ফরিদপুর থেকে মার্চ করতে করতে বরিশালের দিকে অগ্রসর হয়। চারটি জেট বিমান বরিশালের ওপর অনবরত বোমা বর্ষণ করে । ছয়টি হেলিকপ্টারযোগে পাকবাহিনী বরিশালের অসংখ্য ছত্রীসেনা নামিয়ে দেয়। প্রচন্ড লড়াই শেষে পাকবাহিনী বরিশাল শহর দখল করে নেয়।
মুক্তিযোদ্ধারা বরিশাল শহরের চার মাইল দূরে লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে তাদের ঘাঁটি স্থানান্তর করে।
বরিশাল শহরের কয়েক মাইল উত্তরে জুনাহার নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচন্ড গোলা বিনিময় হয়।
বরিশালের গৌরনদীর উত্তরে কটকস্থল নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ব্যুহ রচনা করে।
বিকেলে পাকবাহিনী গোপালগঞ্জের মানিকদাহ ও হরিদাশপুরে প্রবেশ করে। পাকিস্তানের প্রাক্তন বানিজ্য মন্ত্রী ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীনতা-বিরোধীদলের সহায়তায় পাকবাহিনী গোপালগঞ্জ স্টেডিয়াম, ঈদগাহ মাঠ এবং কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে।
নওগাঁর কুমরিয়া, জাফরাবাজ, লক্ষণপুর, মোহনপুর, হাপানিয়া, একডালা ও মাধাইমুরী গ্রামে পাকহানাদার বাহিনী আক্রমণ চালায়। পাক বর্বরদের অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকান্ডে গ্রামের পর গ্রাম ভস্মীভূত হয় এবং কুমরিয়া গ্রামের মেরু মন্ডল, জাফরাবাজ গ্রামের আকালু মন্ডল, ফয়েজ মন্ডল, আলী মন্ডল ও মোহনপুর গ্রামের ১১ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
নওগাঁ জেলার তিলকপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গড়ের হাটে পাকহানাদার বাহিনী হামলা চালায়। বর্বরদের এ হামলায় ১৩ জন নিরীহ মানুষ শাহাদাৎ বরণ করেন।
মুক্তিবাহিনী করেরহাট থেকে পিছুহটে রামগড়ে চট্টগ্রাম সেক্টরের সদর দফতর স্থাপন করে।
সামরিক কর্তৃপক্ষ খ-অঞ্চল (বাংলাদেশ)-কে তিনটি সামরিক সেক্টরে ও ১০টি সাব-সেক্টরে ভাগ করে। সেক্টর তিনটি হচ্ছে: ঢাকা, কুমিল্লা ও বগুড়া।
কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটির মিশন সফল করার উদ্দেশ্যে জেলা ও মহকুমা সদরে শান্তি কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির প্রতিনিধিদের পাঠানোর ঘোষণা দেয়।
রাজশাহীতে আয়েনউদ্দিনের নেতৃত্বে জামাত নেতা আফাজউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ‘শান্তি কমিটি’গঠিত হয়। ঢাকা পিডিপি-র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল হান্নান এক বিবৃতিতে জানান, পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাবলীর জন্যে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণরূপে দায়ী। তাদের আসল উদ্দেশ্য আমাদের পবিত্র ইসলামী রাষ্ট্রের অংশকে ছিনিয়ে নিয়ে ভারতের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/এএস/পিএস/অ/এপ্রিল ২৫, ২০১৪)