গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ
শামীম রেজা ডাফরুল, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) : আজ ১২ ডিসেম্বর। গাইবান্ধার সমৃদ্ধ জনপদ গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের বিভিষিকাময় অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে লাল-সবুজের মাঝে মানচিত্রখচিত পতাকা উড়িয়ে সামগ্রিক বিজয় ছিনিয়ে আনার ৪দিন পূর্বেই এখানে ওড়ে বিজয়ের পতাকা। হানাদার মুক্ত হয় রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ গোবিন্দগঞ্জ থানা। পাকিস্তানী লুটেরা, বেঈমান শোষকদের নির্যাতন আর বিশ্বাসঘাতকতার কবল থেকে মুক্ত হয় এ জনপদ। আজকের এ দিন মুক্তির আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিল এখানকার সকল শ্রেণীর মানুষ ।
১৯৭১সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানিদের গণহত্যা এবং ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে গোবিন্দগঞ্জে এসে পৌঁঁছে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে স্বাধীনতা পাগল আপামর জনতাকে সাথে নিয়ে এখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সংগ্রাম কমিটি গোবিন্দগঞ্জের অদুরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের কাটাখালী সেতুটি ধ্বংসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ লক্ষে ২৭ মার্চ সকালে শত শত মুক্তিপাগল তরুণ-যুবক-ছাত্র- জনতা কোদাল, শাবল, হাতুরী, খুন্তি ইত্যাদি নিয়ে ট্রাকযোগে আবার কেউ পায়ে হেঁটে পৌঁছে কাটাখালী ব্রীজে এবং সকলের পরিশ্রমে সেতুর উত্তর পার্শ্বের কিছু অংশ ভাঙ্গাও হয়। এরই মধ্যে খবর পেয়ে রংপুরের দিক থেকে পাক বাহিনীর একটি কনভয় ছুটে আসে ব্রীজের কাছে। এখানে পৌঁছেই এলোপাতারী গুলি চালাতে থাকে তারা মুক্তিপাগল বাঙ্গালীর উপর। এ সময় দিগ্বিদিক ছুটে পালায় অনেকে। এলোপাথাড়ি গুলির আঘাতে সেখানেই শহীদ হন আবদুল মান্নান আকন্দ, বাবলু মোহন্ত, বাবু দত্ত সহ অজ্ঞাত পরিচয় এক কিশোর ও এক বৃদ্ধ।
এরপর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে হিলি, গাইবান্ধা এবং বোনারপাড়া ও মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রি-মুখী আক্রমণে প্রায় দুই শত পাকসেনা নিহত এবং অন্যরা লুঙ্গি, গেঞ্জি পড়ে সাধারণ বেশে পালিয়ে যায়। পর দিন ১২ ডিসেম্বর জয় বাংলা শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্রজনতা হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে উত্তোলন করে লালসবুজের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত জাতীয় পতাকা। হানাদার মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ।
(এসআরডি/এএস/ডিসেম্বর ১২, ২০২১)