পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস আজ
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : আজ ৮ ডিসেম্বর গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। বিজয়ের ৫০ বছর আগে এদিন ঘাতক পাক হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায় এ উপজেলা হতে। শত্রু মুক্ত হয়ে বিজয় এসেছিল পলাশবাড়ী উপজলোয়। স্থানীয় ভাবে দিনটি যেমন বেদনা বিঁধুর তেমনি আনন্দের। হানাদার বাহিনী পতনের পর এলাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিলো মুক্তির উল্লাস। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে বিজয় উৎসবের কাফেলা 'জয় বাংলা'-' জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পলাশবাড়ীর আকাশ-বাতাস।
মহান মুক্তিযুদ্ধে পলাশবাড়ী এলাকার আব্দুল মান্নান,এসএম হুদা,এনায়েত হোসেন বাবু,এন্যায়েত উল্লাহ্,বারেক ব্যাপারী, মহিনী রিষি, তরনী রিষিসহ অনেকেই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। যারা বেঁচে ছিলেন তাদের মধ্যে আজ অনেকেই বেঁচে নেই, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আজ অনেকেই পরলোকগত হয়েছেন। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে কত মানুষ নিহত হয়েছে। কত মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে। নাম না জানা অনেকেই হয়েছেন বীরঙ্গনা। তার সঠিক তথ্য কেউ জানে না। হানাদার বাহিনী কথা বলতো বায়োনেট দিয়ে এবং হাসতো মানুষের বুকে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে গুলি চালিয়ে তাজা রক্ত ঝরিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরে নির্দিষ্ট কিছু স্থান ছাড়া অসংখ্য গণকবর ও বধ্যভূমি এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন।
পলাশবাড়ীর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অফিসের অভ্যন্তরে পাক হানাদারদের ক্যাম্পে এলাকার অসংখ্য স্বাধীনতাকামীদের ধরে নিয়ে এসে পাক হানাদার বাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ স্থানটিতে নিহতের গণকবর দেয়া হয়। পলাশবাড়ী বধ্যভুমি হিসাবে পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন সেখানে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও নাম ফলক নির্মাণ করেন। উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত কাশিয়াবাড়ীর পশ্চিম রামচন্দ্রপুরে পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলসামসসহ তাদের দোসরদের সহযোগিতায় এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুদের ধরে নিয়ে এসে একত্রে সারিবদ্ধ করে প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন এখানেও একটি নাম ফলকসহ সার্বিক উন্নয়ন করেন। এরপর শুধুমাত্র মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের দিনে বীর শহীদদের আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মরণ করে থাকে। গোটা বছর চিহিৃত বধ্যভূমি গুলো থাকে চরম অবহেলিত অবস্থায় থাকে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্থানীয় পিয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকিস্থানী হানাদার প্রতিরোধ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। গোটা মার্চ মাস জুড়ে পলাশবাড়ী এলাকা ছিল উত্তাল। এই উত্তাল দিনগুলোতে ঘাতক পাকবাহিনী বীর সেনাসহ ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সে সময়ে পাকবাহিনী পাবনা জেলার ঐতিহ্যবাহী নারিন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎসময়ের প্রধান শিক্ষক গর্বিত পিতা আব্দুল আজিজ ও মাতা ফাতেমা বেগম দম্প্রতির বীর সন্তান লেফ: রফিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারতে শরনার্থী হয়ে প্রবেশ করেছিল এলাকার ৩৫ হাজার নর-নারী।
পাক বাহিনীদের সহায়তায় স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধীরা তৎসময় ২ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন সম্পদ বিনষ্ট করেছিল। পাকবাহিনীর নানা শিঁহরিত ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ চালানোর এক পর্যায়ে ৮ ডিসেম্বর পলাশবাড়ী এলাকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। সে হতে এ দিনটিকে পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস পালন করছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্বাধীরতার স্বপক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক পেশাজীবী সংগঠনগুলো।
(এসআইআর/এএস/ডিসেম্বর ০৮, ২০২১)