‘জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষ এখন অনেক সচেতন’
দীর্ঘ পাঁচবছর পর আবারও ভোটের পূর্ণ আমেজে ফিরছে দেশ। ঘনিয়ে আসছে স্থানীয় সরকারে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। আগামী ২৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ও রাজনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভোটের মাটে চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। চষে বেড়াচ্ছেন গ্রামের মেঠোপথের অলিগলি। ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন জয়ী হলে পরে এলাকার উন্নয়নে নানা ভাবনার কথা। প্রাকৃতিকভাবে সবুজ বন, অসংখ্য টিলা পাহাড় আর বিশাল হাওর বেষ্টিত ঘনবসতীপূর্ণ জগন্নাথপুর গ্রামের পুরোটাই ৬ নং ওয়ার্ডের আওতায়। একথায় এক ওয়ার্ড এক গ্রাম। এলাকায় তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় সাবেক মেম্বার ইমরান আহমদ। যেকোন সঙ্কটে মানুষ তাঁকে পাশে পায় সবসময়। এবারও তিনি ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ছাড়াও ওই ওয়ার্ডে আরও একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
তৃণমূলের প্রান্তিক মানুষের চাওয়া-পাওয়া আর ভোটের হাওয়া নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী ও সাবেক মেম্বার তরুণ সমাজ সেবক ইমরান আহমদ। আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মোঃ আব্দুল কাইয়ুম।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : স্বাগত আপনাকে, তৃনমূল পর্যায়ে প্রান্তিক মানুষের সেবা, শান্তি শৃঙ্খলাসহ গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বড় একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ তথা ইউনিয়ন পরিষদ। সেখানে সাধারণ জনগ্রযেণ ভোটে প্রতি পাঁচবছর পর পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎসব মূখর পরিবেশে চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সেই বিবেচনায় তরুণ বয়সে কীভাবে জনপ্রতিনিধি হওয়ার আকাঙ্কা জাগলো?।
ইমরান আহমদ: সত্য কথা হল আমি আজ থেকে পাঁচবছর পূর্বে এই ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার ছিলাম, সে কারণে এই ওয়ার্ডে কাজের কারনে কিছু মানুষের আস্থা আর ভালবাসা অর্জন করার সৌভাগ্য হয়েছে। আর যখন মেম্বার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই তখন মাত্র ২৬ বছর বয়সের তরুণ। সেই বয়সে মূলত এলাকার মুরব্বীদের অনুরোধে নির্বাচন করার আকাঙ্খা জাগে। তখন হটাৎ করে সিদ্ধান্ত নেইনি। সেক্ষেত্রে ভেবে চিন্তে নিজের পরিবার ও মুরব্বিদের পরামর্শ নেই, তার পর শুরু করি পথচলা। সবশেষ সর্বস্তরের মানুষের বিফুল ভোটে আমি মেম্বার নির্বাচিত হই।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : একজন ইউপি সদস্য’র কাছে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব অনেক, যেমন পারিবারিক কলহ নিয়ে অভিযোগ, গ্রাম্য সালিশি, জন্ম নিবন্ধন, বয়স্কভাতা, উত্তরাধিকার সনদ, মৃত্যু সনদ, গরিব অসহায় মানুষের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতার জন্য মানুষ প্রথমত ইউপি সদস্য’র স্বরণাপন্ন হয়ে থাকেন। একটি ওয়ার্ডে কয়েকহাজার মানুষের বসবাস। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা বিবেচনায় জন মানুষের আকাঙ্খা পূরণ তথা কমিটমেন্ট রক্ষা করা কতটা সম্ভব হয় একজন ইউপি সদস্য’র পক্ষে?
ইমরান আহমদ: এসব ক্ষেতে আমি শতভাগ সফল না হলেও গর্ব করে বলতে পারি সত্তরভাগ সফল। নির্বাচিত থাকাকালে পারিবারিক কলহ নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান, জন্ম নিবন্ধন, বয়স্কভাতা, উত্তরাধিকার সনদ, মৃত্যু সনদসহ বেশিরভাগ সেবা আমি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি। কোন স্বাক্ষরের জন্য কেউ আমার পেছনে ছুটেছে এমনটা কখনো হয়নি। কারণ মানুসের চাওয়াটা খুব বেশি নয়, তার চায় সঠিক সেবা। তবে ইচ্ছে থাকলেও সব মানুষের পূর্ণাঙ্গ চাওয়া-পাওয়া পূরণ সম্ভব হয়না।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : গ্রামাঞ্চলে জমিজমা ও পারিবারিক সালিশ, মাদকসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রয়েছে ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির। সেক্ষেত্রে ন্যায় বিচার নিশ্চিতসহ এসব বিষয়ের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা একজন মেম্বারের পক্ষে কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ সম্ভব বা এসব প্রয়োগ করতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হয়?
ইমরান আহমদ: আমি পাঁচবছর মেম্বার ছিলাম, ন্যায় বিচার নিশ্চিতে আমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছি, প্রতিটি সালিশ বৈঠক করতে গিয়ে আমার মধ্যে প্রবল কাজ করেছে মহান আল্লাহ ভয়। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম দুনিয়ার বিচারের পর বড় বিচার রয়েছে পরকালের শেষ বিচার। এক্ষেতে ন্যায় বিচারের স্বার্থে কারো প্রতি কোন অবিচার কখনো করিনি। যার কারণে বর্তমানে আমি নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি না থাকার পরও মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখায় গ্রামের প্রতিটি সালিশ বৈঠকে আমার ভূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মত।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : বর্তমানে মাদকের মতো মরনঘাতী নেশা সমাজে বড় একটি সমস্যা, এটি বেড়েই চলেছে এবং আমাদের যুব সমাজ ধ্বংশের বড় একটি কারনও। এটি নির্মুলে নির্বাচিত হলে কী প্রদক্ষেপ নিবেন?।
ইমরান আহমদ: আমি আগেও মাদকের বিরুদ্ধে সরব ছিলাম, ইনশাআল্লাহ নির্বাচিত হলে এটি নির্মূলে সচেতন যুব সমাজকে সাথে নিয়ে শতভাগ প্রচেষ্টা চালাবো।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : গ্রাম্য সালিশ কিংবা পারিবারিক সমস্যা নিয়ে একজন জনপ্রতিনিধির কাছে মানুষ বিচার প্রার্থী হলে পরে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভোট ঘনিয়ে আসার কারনে বিচার প্রার্থী সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হন বলে গুঞ্জন রয়েছে। যেটি ন্যায় ও ইনসাফের পরিপন্থি বলে অনেকেই মনে করেন,এটি সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
ইমরান আহমদ: ভোটের মাঠে কথা সত্য হলেও ন্যায় বিচারের স্বার্থে এটি কখনো আমি করিনি কিংবা আমার মধ্যে এরকম মানসিকতা কখনো কাজ করেনি।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : আগেকার সময়ের ভোটার আর বর্তমান সময়ের ভোটারদের মানসিকতার মধ্যে পরিবর্তন বেশ লক্ষনীয়, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবিষয়ে আপনার ধারনা কী?
ইমরান আহমদ: বর্তমান সময়ের ভোটের আর আগেকার সময়ের ভোটারদেন মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এটা বলতে দ্বিধা নেই। কারণ দেশ এখন অনেক উন্নত হয়েছে সেই সাথে মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তনও এসেছে। আর ভোটের মাঠে মানুষ এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক সচেতন।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : আগামী নির্বাচনে জয় নিয়ে আপনার ভাবনা এবং ভোটারদের কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি কী ?
ইমরান আহমদ: আমাদের গ্রাম একদিকে হাওর অপর দিকে সবুজ বন আর পাহাড় বেষ্টিত হওয়ায় এখানকার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুব একটা উন্নত ছিলনা,আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বমোট ১১টি রাস্তা, কালবার্ট নির্মাণ এবং ইটসলিং করতে সক্ষম হই। পাশাপাশি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতেও আমার প্রচেষ্টার কোন কমতি ছিলনা। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে এলাকার কোন রাস্তাঘাট ভাঙ্গাচোরা থাকবেনা ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করাই আমার বড় প্রতিশ্রুতি। আর নির্বাচনে তো আমি সাধারণ মানুষের চাপে প্রার্থী হয়েছি। সুতরাং এলাকার সামগ্রীক উন্নয়নে আমার অতীত ভুমিকা দেখেই আগামীতে বিফুল ভোটে এখানকার ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ইমরান আহমদ: আপনাকেও ধন্যবাদ
(একে/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০২১)