২৩ এপ্রিল, ১৯৭১
‘পাকবাহিনী নজিরবিহীন নারকীয় হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে’
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বেনাপোলে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে বৃটিশ এম.পিডগলাস ম্যানকে স্বাগত জানান। এখানে উভয়ের মধ্যে একঘন্টাব্যাপী আলোচরা হয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য যশোরের কাগজপুকুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ঘাঁটির ওপর আক্রমণ করে। দীর্ঘ ছয় ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা বেনাপোল কাস্টম কলোনী ও চেকপোস্ট এলাকায় বিকল্প প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়। এ যুদ্ধে ইপিআর বাহিনীর নায়েক সুবেদার মজিবুল হকসহ ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন। অন্যদিকে পাকবাহিনীর ৫০ জন সৈন্য নিহত ও অনেক আহত হয়।
পাকবাহিনীর ২০০ সৈন্য রাঙামাটি থেকে মহালছড়ির দিকে যাত্রা করলে ক্যাপ্টেন কাদের ও লে.মাহফুজের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
পাকিস্তানিদের কাছে ফেনীর পতন হলে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
পাকিস্তান বাহিনীর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লাকসাম পরিদর্শন করেন। তিনি লাকসাম শহরের প্রবীনদের এক সমাবেশে প্রতিশোধ গ্রহণের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘গত দুদিনে আপনাদের মুক্তিরা আমাদের বেশ ক্ষতি করেছে। আমরাও তাই করবো।’ অতঃপর পাকবাহিনী নজিরবিহীন নারকীয় হত্যাকান্ডে মেতে ওঠে।
পাকবাহিনী তিস্তা ও লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি থেকে প্রবল গুলিবর্ষণ করতে করতে কুড়িগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। বর্বর পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের তীব্র আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে নিরাপদ স্থানে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করে।
নওগাঁয় হানাদার বাহিনীর গুলিতে মোহনপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, মখরপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক, দশপাইকার গ্রামের বাচ্চু ও মমতাজউদ্দিন শাহাদাৎ বরণ করেন। বলিহার ইউনিয়নের বাসিন্দা লক্ষ্নৌর মরিস মহাবিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতের ওপর বিশেস সনদপ্রাপ্ত নওগাঁর বিশিষ্ট সঙ্গীত বিশারদ ওস্তাদ মানিক চক্রবর্তী এবং মাধাইমুরী গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী আলিমউদ্দিন খাঁ মিলন ও আলিম পৃথক পৃথক ঘটনায় পাকসেনাদের হাতে শহীদ হন।
যুক্তরাজ্যের কমন্স সভায় শ্রমিক দলীয় সদস্য ও অর্থনৈতিক সাহায্য বিষয়ক কমিটির সাবেক সচিব পিটার শোর বলেন, ‘পূর্ব বাংলার পাকিস্তান সরকারের আচরণ সর্বপ্রকার নীতিবহির্ভূত বন্য আচরণ। এ অত্যাচার উৎপীড়ন উপেক্ষা করা লজ্জাজনক হবে। আমি অনুরোধ করছি, শ্রমিক দল যেন এ বিষয়ে দৃঢ়তার সাথে কথা বলে এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্যদান অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।’
সিলেট শান্তি কমিটির উদ্যোগে স্বাধীনতাবিরোধীরা শহরে মিছিল করে। মিছিলে পাকিস্তান জিন্দাবাদ, ইয়াহিয়া খান জিন্দাবাদ এবং ভারত ও তার দালালদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিভিন্ন শ্লোগান প্রদত্ত হয়। মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সভায় শান্তি কমিটির নেতারা দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের ) উৎখাত করে পাকিস্তানের অখন্ডতা বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়।
পাকিস্তান সরকার আগামী ২৬ এপ্রিল ১২টা থেকে কলকাতার পাকিস্তানি ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একই সময়ে ঢাকায় ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ করে দেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
কৃষক শ্রমিক পার্টির এ.এস.এম. সোলায়মান, নেজামে ইসলামের সাইদ মো.মোস্তফা আল মাদানী, প্রাক্তন এম.এন.এ. রহিমুল্লাহ চৌধুরী ও প্রাক্তন এম.পি.এ. আবদুস সোবহান ঢাকায় পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা দেশপ্রেমিক জনগণ ও সশস্ত্র সেনাবাহিনী নস্যাৎ করে দিয়েছে। আমারা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত। তারা অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূল করতে সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানায়।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/এএস/পিএস/অ/এপ্রিল ২৩, ২০১৪)