ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক কলহ অনেক কমে গেছে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২-৩ বছর আগেও ঈশ্বরদী শহর ও গ্রামে পারিবারিক ও সামাজিক কলহ লেগেই থাকতো। ধার-দেনা নিয়ে মারামারি, মাদকাসক্তসহ নানা বিষয়ে বিচার সালিশ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা ছিলো। গ্রামের মাতবর, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের বিচার-সালিম নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি থানা পুলিশও অভিযোগ বা মামলা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতো।

সময়ের আবর্তে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। কমেছে বেকারত্বের হার, প্রতিদিনই নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও চাকরিতে যোগদানের কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারে অভাব-অনটন ঘুচেছে। ঈশ^রদীর সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের যাত্রা ক্রমশ: সম্প্রসারিত হচ্ছে। গ্রামে বিচার-সালিশ এবং কথায় কথায় থানায় অভিযোগ দায়েরের সংখ্যাও কমেছে।

নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে রাশিয়ান ১০-১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয় কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছে। ঈশ্বরদী ইপিজেডেও প্রায় ১৫ হাজার নারী-পুরুষ কর্মরত। বেকারত্ব দূর হওয়ায় ঈশ্বরদীতে নতুন ও ইতিবাচক আবহের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন কাজ করছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এরই মধ্যে হাজার হাজার বেকার যুবকের ভাগ্য বদলে গেছে। একই সাথে বদলে গেছে সামাজিক জীবনযাপনের মান। গৃহহীনরাও এখন জমি কিনে নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।

ঈশ্বরদী শহর বা আশপাশের যে যুবকটি বেকারত্বের অভিশাপে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল, রূপপুর প্রকল্পে কাজ পেয়ে এখন স্বাভবিক জীবনে ফিরে, সচ্ছল পরিবারের মতো উপার্জনম ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এদের বেতন ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, থানায় পারিবারিক কলহ নিয়ে আগে প্রায়ই অভিযোগ আসত। এখন এসব অভিযোগের সংখ্যা খুবই কম।

ঈশ্বরদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র রহিমা খাতুন জানান, পারিবারিক অশান্তি নিয়ে পৌরসভায় পারিবারিক আদালতে সালিশ এখন একেবারেই কমে গেছে।

রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, প্রকল্পে তিন সহস্রাধিক বিদেশি নাগরিকের পাশাপাশি প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। প্রত্যেকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে কাজ করায় কোনো সমস্যা হয় না।


আরএনপিপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, করোনা সংক্রমণের কারণে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা বৃহৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছি। শ্রমিক-কর্মচারীদের দিনে ২ বার তাপমাত্রা পরীা বাধ্যতামূলক। বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ায় দেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(এসকেকে/এএস/জুলাই ১৩, ২০২১)