২৮ জুন, ১৯৭১
পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ পূর্ব পরিকল্পিত : ইয়াহিয়া
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল রাজৌর থানার টাহেরহাটে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ১০ জন সৈন্য নিহত হয় এবং পাকসেনারা টাকেরহাট অবস্থান ত্যাগ করে।
ময়মনসিংহে ভালুকার ভাওয়ালিযা বাজুরঘাটে পাকবাহিনীর ঘাঁটির ওপর কাদেরীয়া বাহিনীর ৬ নম্বর কোম্পানির তিনজন বীরযোদ্ধা গ্রেনেডের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। এতে ৭ জন পাকহানাদার নিহত ও ১০/১২ জন আহত হয়।
ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-নেতাদের মধ্যে আ.স.ম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, মোস্তফা মহসীন মিন্টু, খায়রুল ইনাম খসরুকে তাদের অনুপস্থিতিতে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়।
ঢাকায় জেনারেল হাসিদ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি পরিদর্শন করে বিমান বাহিনীর সদস্যদের দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) সমস্ত ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়ার নির্দেশ দেন।
কমান্ডার মাহবুবের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা পঞ্চগড়ের তালমা ব্রিজ রেকী করে পাকসেনাদের দালাল শামসু মেম্বারের বাড়িতে গ্রেনেড আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে তিনজন দালাল নিহত হয়।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য ইতিপুর্বে ঘোষিত জাতীয় পরিষদে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন পদ্ধতিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে শাসনতন্ত্রের চ’রান্ত রূপদান করার পর তা জাতীয় পরিষদে পেশ করা হবে। পরিষদে তা সংশোধন করা যাবে। যিনি ঘোষণা করেন, কেন্দ্র ও প্রদেশ জনগণের সরকার কায়েম হবার পর একটি নির্দিষ্ট পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বলবৎ থাকবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হলেও নির্বচিত প্রতিনিধিরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সদস্যপদে বহাল থাকবেন। নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্ন ওঠে না। তবে অযোগ্য বিবেচিত সদস্যদের আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা রাষ্ট্র বিরোধী কাজে অংশ নিয়েছেন তাদের পরিষদ সদস্যপদ থাকবে না। ইয়াহিয়া খান বলেন, দেশে পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান সামরিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকবে, তবে ৪ মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ দেশকে খন্ড-বিখন্ড করার জন্য ভোট দেয়নি, ভোট দিয়েছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন লাভের জন্য। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী অভিযানের সময় পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ পূর্ব পরিকল্পিত। আওয়ামী লীগের চরমপন্থী, বিদ্রোহী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে যোগসাজশ ছিল। সেনাবহিনী পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
গোলাম আজম এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘোষিত কর্মসূচিই জাতির জন্য একমাত্র পথ, যা অবশিষ্ট রয়েছে।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/অ/জুন ২৮, ২০২১)