২৪ জুন, ১৯৭১
কুমিল্লার বিবিরবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ২১ জন পাকসেনা নিহত হয়
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে প্রেরিত এক তারবার্তায় পাকিস্তানে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার বার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করছে। সরবরাহকৃত অস্ত্র এখানে গণহত্যার কাজেই ব্যবহৃত হবে।’
লে. মাহবুবের নেতৃত্ত্বাধীন দুই প্লাটুন যোদ্ধা কুমিল্লার পূর্বে পাকবাহিনীর বিবিরবাজার অবস্থানের ভিতর অনুপ্রবেশ করে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে পাকসেনাদের ২১ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়।
মুক্তিবাহিনীর তিন প্লাটুন যোদ্ধা কুয়াপাইনা ও খৈনল এলাকা থেকে কসবার উত্তরে পাকবাহিনীর লাটুমুড়া অবস্থানের বামে ও দক্ষিণে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অভিযানে পাকসেনাদের ৯ জন নিহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়।
শালদা নদী অবস্থান ও কসবার টি. আলীর বাড়ি এই দুদিক থেকে দুই কোম্পানির পাকসেনা এসে কায়েমপুরের নিকট মিলিত হয়। তারপর মর্টার, মেশিনগান ও কামানের সাহায্যে পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর মন্দভাগ অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। দু’ঘন্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা পিছু হটে এবং কায়েমপুর অবস্থান তলে নিয়ে শালদা নদীর মূল ঘাঁটিতে চলে যায়। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের ২৪ জন হতাহত হয়।
জলপাইগুড়ির ‘মুরতি’ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে ৬নং সেক্টরে রংপুর দিনাজপুরের থুকরাবাড়ি চাউলহাটি, সোনারহাট ও হেমকুমারী ইউনিট বেসে ৪টি দল ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রত্যেক দলের সদস্য সংখ্যা ৯০ জন। এখান থেকে শুরু করে তারা পরবর্তী গেরিলা যুদ্ধ যুদ্ধাভিযান।
মেক্সিকোর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফের্টি জিল, বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার পরিষদের মহাসচিব ড. রিচার্ডো মলিনা মার্টি পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর গণহত্যা বন্ধের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিশ্বশক্তির প্রতি আহ্বান জানান।
সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন ও ইরানের শাহানশাহ রেজা শাহ পাহলভী বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নিজ নিজ সরকারের অভিমত ব্যক্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বার্তা পাঠান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ভারতীয় পার্লামেন্টে বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরস্ত্র ও অসহায় জনগণের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিপীড়নের ফলে সেখানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নতুন করে অস্ত্র সরবরাহ করলে কেবল বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি ঘটবে না-সেই সাথে গোটা উপ-মহাদেশের তথা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হবে।’
দামেস্কে (সিরিয়া) অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের দশম নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/পিএস/জুন ২৪, ২০২১)