রৌমারীতে বন্যার্তদের হাহাকার
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : ঘরে বাইরে অথৈ পানি। খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। দাঁড়াবার ঠাঁই নেই। সাহায্য নেই। শিশু বৃদ্ধ আর গবাদি পশু নিয়ে হয়েছে আরেক জ্বালা। তাদের খাবার চাই। দীর্ঘ ১৮ দিন থেকে এ হাল হয়েছে রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র চরের ৬৫ হাজার জনমানুষের। দূর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের।
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ে থাকে ত্রাণের একটা প্যাকেটের আশায়। মালবাহি নৌকা দেখলেই শিশুরা শূন্যে হাত তুলে ডাকতে থাকে। সবগুলো তো আর ত্রাণের নৌকা নয়। ফলে হতাশ হয় তারা। কদাচিৎ মেলে ত্রাণের দেখা। বিত্তবানরা ব্যক্তিগতভাবে এবং এনজিওগুলো সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও প্রয়োজনের তুলনায় সেটা একেবারেই অপ্রতুল।
গত শনি ও রোববার ব্রহ্মপুত্রের বন্যা কবলিত চরগুলো ঘুরে ঘুরে দেয়া গেছে এসব চিত্র। হাজার হাজার মানুষ কিঞ্চিৎ উঁচু বাঁধ রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছে। এছাড়া কোথাও কোন জায়গা নেই। খোলা আকাশের নিচে চলছে জীবন যুদ্ধ। এমনই একটি চরের নাম ‘পাখিউড়া’। ওই গ্রামে এ প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা হয় কদভানু বেওয়ার (৭৫)। তিনি বললেন, ‘আমাগো দিকে ক্যারা দেখবো? অনেক দিন থেইক্যা পানিতে ভাসতাছি কিন্তু কেউ তো দেখতে আইলো না। এইতো আমাগো গরিবের কপাল।’
খেদাইমারি গ্রামের আছিয়া বেগম স্থানীয় এনজিও আরএসডিএ’র ত্রাণ নিতে এসেছেন। তিনি জানান, ১৮ দিন ধইরা পানিতে ডুইবা আছি। খোঁজ নেবো ক্যারা? সরকার তো আমগোর দিকে দেহে না।’ এখানে কেন এসেছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘আরএসডিএ’র ত্রাণ নিতে আইছি। পোলাডা সকাল থেইক্যা না খাওয়া। এ চাল পামু তার পর সেদ্ধ কইরা খাওয়ামু।’
সিএলনপি’র আওতাও রোববার রৌমারীর বন্দবেড় ইউনিয়নের ৩টি চরের ১৩’শ বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে আরএসডিএ। প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি আলুসহ ১ হাজার ৫৮টাকা মুল্যের বেশকিছু সামগ্রি। ত্রাণ নিতে আসা মানুষের হাহার দেখে অতিমাত্রায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এনজিওটির কর্তাব্যক্তিগণ। ঠাঁইহীন মানুষের দুরাস্থা আর ক্ষুধার অসহ্য যন্ত্রনায় কাতর হাজার হাজার মানুষের করুণ চাহনী সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছিল সবার। একটা প্যাকেট পাবার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার প্রহর যেন কাটে না। আর ত্রাণের নৌকা এলেই পড়ে যায় হুড়োহুড়ি। এসব যেন চরের মানুষের এখন নিত্য দিনের প্রতিচ্ছবি।
জানা গেছে, সরকারীভাবে এ পর্যন্ত ৩০ মে. টন চাল দেয়া হয়েছে। ৬৫ হাজার বন্যার্ত মানুষের জন্য এ ত্রাণ মাথাপিছু কতটুকু পড়েছে তা হিসেব করলেই উত্তর মিলবে। পাশাপাশি প্রথম দিকে বিত্তবানরা ও এনজিওগুলো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায়নি। বন্যার্তরা অভিযোগ করেন, এখন যা দেয়া হচ্ছে এটা এর আগে দিলে মানুষের এত দুরবস্থা হতো না।
উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বলেন, সরকারিভাবে এ পর্যন্ত রৌমারী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৩০ মে. টন চাল বিতরণ করা হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ইউএনও আব্দুল লতিফ খান জানান, চাহিদা দেয়া হয়েছে পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দাতা সংস্থা সমাজ উন্নয়ন’র কুড়িগ্রাম জেলা ম্যানেজার বাসুদেব চক্রবার্তী জানান, আমরা যা করছি নেহাতই বিবেকের তাড়নায়। চেষ্টা করছি মানুষ না খেয়ে যেন মারা না যায়। কিন্তু এ সামান্য ত্রাণ দিয়ে কি বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো যায়?
স্থানীয় এনজিও আরএসডিএ পরিচালনক আব্দুল ওহাব জানান, ১ হাজার ৫৮ টাকা মূলের ১৩টি আইটেম সম্বলিত প্যাকেট ১৩’শ বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। দাতা সংস্থার নিকট আরও চাহিদা দিয়েছি আশা করছি ভবিষ্যতেও ত্রাণ দিতে পারবো। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, আরএসডিএ’র ল্যান্ড সাপোর্ট অফিসার মাসুদুর রহমান।
(আরআইএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৪)