বগুড়া প্রতিনিধি : শ্রমিকদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, শ্রমজীবী বীমা, সার্বজনীন পেনশন এবং সামরিক বাহিনীর মতো রেশনিং ব্যবস্থা  চালু করতে বাজেটে নিয়মিত বরাদ্দ রাখার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে বগুড়ায় মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (২৮ মে) বেলা বারোটায় বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন-সমাবেশ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা কমরেড সাইফুজ্জামান টুটুল।

মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমরেড এ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলার সহ-সভাপতি শ্রমিক নেতা শিবসংকর শিবু, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুরেশ চন্দ্র দাস মনো, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান, দপ্তর সম্পাদক শ্যামল বর্মন, প্রচার সম্পাদক সানোয়ার বাবু প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

কমরেড এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, "করোনা ভাইরাস কভিড-১৯ এর সংক্রমণ এবং মৃত্যু সারা বিশ্বকে আতংকিত করে তুলেছে। প্রথম ঢেউ শেষ করে এখন আমাদরকে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যদিও সংক্রমণ এবং মৃত্যু একটি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কিন্তু করোনা সংক্রমণ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। করো না সংক্রমণ অর্থনীতি ও সমাজের সকল ক্ষেত্রকে আক্রান্ত করলেও শ্রমজীবী মানুষের উপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

শ্রমিকরা কাজ না করলে উৎপাদন হবে না, আবার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে যা গোটা সমাজকেই বিপদাপন্ন করে তুলতে পারে। সেই বিবেচনায় একান্ত জরুরী বিষয় ছাড়া উৎপাদন এবং বিপণন এর বিভিন্ন খাতগুলো বন্ধ রাখা প্রয়োজন। আবার এই বন্ধ রাখার ফলে সবচেয়ে বিপদে পড়েছে রিকশা-ভ্যান-ঠেলাগাড়ি চালক, নির্মাণ ও পরিবহন শ্রমিক, দোকান-কর্মচারী, তাঁত, চাতাল, বিড়ি, জরি, পাদুকা শ্রমিক, কুলি, দিনমজুর, ঠিকা শ্রমিক সহ প্রভৃতি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকেরা। একদিকে জীবিকার প্রয়োজন অন্যদিকে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার বিপুল খরচ এই দুই সংকটে শ্রমিকরা দিশেহারা। ফলে জীবিকার প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি উপেক্ষা করেও তাঁরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।"

কমরেড সাইফুজ্জামান টুটুল বলেন, "করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিকের জীবনের সমস্যাগুলোকে প্রকট করে তুলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে খাদ্য, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি, বাসা ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, সন্তানের শিক্ষার খরচ বৃদ্ধি, শ্রমজীবীদের জীবনে বাড়তি বোঝা বয়ে এনেছে। শ্রমজীবী মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেলে তা অর্থনীতিতেও বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। তাই শ্রমজীবী মানুষ এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশের স্বার্থে আমরা মনে করি শ্রমজীবীদের জন্য বাজেটে নিয়মিত বরাদ্দ প্রয়োজন। তাই আমরা আশা করি আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শ্রমজীবীদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, শ্রমজীবী বীমা, সার্বজনীন পেনশন এবং আর্মি রেটে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে নিয়মিত বরাদ্দ দিয়ে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষদের সহায়তা করা অতি জরুরী। যা দেশের অর্থনীতিকেই গতিশীল করবে।"

সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, "করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিকের জীবনের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করোনায় কর্মহীন শ্রমিকদের খাদ্য, চিকিৎসা, অর্থ সহায়তার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ এবং শ্রমিকদের জন্য আর্মি রেটে রেশন, বিনামূল্যে চিকিৎসা, স্বল্পমূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত ও সার্বজনীন পেনশন চালু করতে বাজেটে নিয়মিত বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানান ।

(আর/এসপি/মে ২৮, ২০২১)