আবু নাসের হুসাইন, সালথা (ফরিদপুর) : বাজারে এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ভীড়ে বিলুপ্তির পথে সালথার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৃৎশিল্প।ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মৃৎশিল্পীদের দুর্দিন নেমে এসেছে। মৃৎশিল্প ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে সোনাপুর ও গৌড়দিয়া গ্রামের কুমারপাড়ার দৃশ্যপট।

সালথা উপজেলার সোনাপুর ও গৌড়দিয়া পালপাড়া কুমারবাড়ির বাসিন্দাদের পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন। মাটির পুতুল হাড়ি, পাতিল, সরা, বাসন, কলসি, বদনার কদর এখন আর নেই বললেই চলে। সঠিক সময়ে বর্ষা না হওয়া মাটির উপাদানের পরিবর্তন এবং এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক দ্রব্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় মৃৎশিল্পীরা হারাতে বসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য।

উল্লেখ থাকে যে, হাড়ি পাতিল ও কলসসহ যেকোনো মৃৎশিল্প তৈরিতে প্রধান উপকরণ হচ্ছে, এটেল মাটি ও জ্বালানি কাঠ শুকনো ঘাস ও খর। এ সময় মাটির তৈরি জিনিসের বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল। তখন এই শিল্পের সব মহলেই কদর ছিল। এ শিল্পের মালামাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও ব্যবহার করা হতো।

সূর্য উঠার সাথে সাথে কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি পাতিল বোঝাই ভারা নিয়ে দলে দলে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে যেতেন বলে জানা যায়। তারা পাতিল, কুপি, বাতি, থালা ও দুধের পাত্র, ভাপা পিঠা তৈরির খাজ, গরুর খাবার পাত্র, কোলকি, ধান চাল রাখার পাত্র, মাটির ব্যাংক, শিশুদের নানা রকম নকশার খেলনা বিক্রি করতো ধান ও গমের বিনিময়ে। সন্ধ্যায় ধান ও গম বোঝাই ভারা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসতেন।

উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বাবু পাল, পরিমল পাল ও আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া গ্রামের কার্তিক পাল বলেন, বর্তমানে মাটির হাড়িপাতিলের চাহিদা কমে গেছে। যারা বৃদ্ধ এবং অন্য কোনো কাজ জানেনা শুধু তারাই বাধ্য হয়ে এখনও এ পেশায় আছেন। তিনি বলেন আগে নৌকা করে এটেল মাটি সংগ্রহ করতাম। আবার নিজেরাই নৌকা দিয়ে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করতাম। প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যাপক প্রসারের কারণে মাটির তৈরির জিনিসপত্রের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মাটির তৈরি সামগ্রী তৈরি করার পর তা সঠিকভাবে বিক্রি হয় না।

ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই এই মৃৎশিল্প হারিয়ে যাবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে আবারও জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

(এন/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১)