মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা
হবিগঞ্জে মাদক ব্যবসার নেপথ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা!
তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায় মাদক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন বৃদ্ধিতে সচেতন মহলে চলছে নানা গুঞ্জণ। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমনই কিছু তথ্য।
জানা গেছে, মাদক ব্যবসা ও মাদকের ছড়াছড়িতে মূখ্য ভুমিকা রাখছেন হবিগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাই। হবিগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তারা সবাই কমবেশি সুবিধাভোগী। এদের কেউ কেউ সরাসরি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত আবার কেউ কৌশলে মাসোহারা নেন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। বিনিময়ে অভিযানের আগাম খবরসহ বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে থাকেন মাদক ব্যবসায়ীদের। আর এ কাজের পেছনে রয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট।
সহজ-সরল মানুষদের মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করাই তাদের কাজ। সরকারী চাকরিজীবী বা নামকড়া ব্যবসায়ীরাই থাকেন তাদের মূল টার্গেট।
গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে প্রশান্ত কুমার তালুকদার ও তার দুই বন্ধু বিশেষ প্রয়োজনে হবিগঞ্জ গরুর বাজারের খাদ্য গুদাম এলাকায় গেলে হবিগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসআই আবু হানিফ ও তার জনৈক সহযোগী ওই স্থানে সিভিল পোমাকে ওই স্থানে যান। প্রশান্ত কুমার তালুকদার ও তার দুই বন্ধুর দেহে কৌশলে মাদক দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান তারা। পরে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতির আশ্বাস দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবিও করেন। এ সময় প্রশান্ত কুমার তালুকদার ও তার দুই বন্ধু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ এনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন তারা। তবে পূর্ব শর্ত অনুযায়ী টাকা পাওয়ার আশ্বাসে ঘটনার পরই এএসআই আবু হানিফ ও তার জনৈক সহকারী কনস্টেবল কৌশলে বাচিঁয়ে দেন প্রশান্ত কুমার তালুকদারকে।
তবে এখানেই শেষ নয়, ঘটনার পরই বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোনে বার বার মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাধ্য হয়েই এএসআই আবু হানিফের মোবাইল ফোনের বিকাশে টাকা প্রেরণ করেন প্রশান্ত।
প্রতিবেদকের হাতে আসা কয়েকটি স্কিনশট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টা ২১ মিনিটে প্রশান্ত তালুকদারের মোবাইল নাম্বার থেকে এএসআই আবু হানিফের মোবাইল ফোনের বিকাশে বেশ কিছু টাকা প্রেরণ করেন। তবে এ টাকায় তিনি সন্তোষ্ট না হয়ে ক্রমান্বয়ে বাড়াতে থাকেন পরিমাণ। সর্বশেষ প্রশান্ত কুমার তালুকদার বাধ্য হয়েই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অবগত করেন।
হবিগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খালেদুল করিম জানান, বিষয়টি শুনেছি, অভিযুক্ত এএসআই আবু হানিফ ও তার সহযোগীকে শোকজ করে আইনহত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(টিএইচ/এসপি/জানুয়ারি ৩০, ২০২১)