বকেয়া বেতন পাচ্ছেন দৃষ্টিহীন স্কুল পিয়ন আহাম্মদ আলী
আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা : বহুদিন পরে অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬০ বছর বয়স্ক দৃষ্টিহীন পিয়ন আহাম্মদ আলীর। প্রায় ৩ বছরের বকেয়া বেতন-ভাতার মধ্যে নভেম্বরসহ চার মাসের বেতন দেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন।
গতকাল ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এই সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দৃষ্টিহীন পিয়ন আহাম্মদ আলীসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের নভেম্বর/২০ মাসের বেতন বিল প্রস্তুক পূর্বক আগামি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নবীনেওয়াজ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় যে ,দৃষ্টিহীন পিয়ন আহাম্মদ আলীর বেতন-ভাতা স্থগিতের ঘটনার তদন্তকার্যে ১৩ ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাহাবুবর রহমান ও তৎকালীণ কমিটির সভাপতি সুবল চন্দ্র সরকার বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন। এসময় ভুক্তভোগী আহাম্মদ আলীর বেতন বিল ও ইনডেক্সসহ তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার । এরপর বেতন স্থগিতের প্রক্রিয়াসহ সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ চাইলেও কোন সদত্তর দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষকসহ তৎকালীণ সভাপতি। যদিও জন্ম তারিখ জটিলতায় কমিটির সিদ্ধান্তে রেজুলেশন করে বেতন স্থগিতের দাবি করেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। এছাড়া আর কোন নিয়ম-বিধিবিধান এমনকি আদেশ-নির্দেশনাও তারা এসময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেখাতে পারেনি। শুধু তাই নয়,এছাড়াও নিজেদের দোষ আড়াল করতে প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি নানা অজুহাতে সব দায় প্রধান শিক্ষক (তৎকালীন) জাহাঙ্গীর আলমের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নবীনেওয়াজ বলেন, উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘নিয়ম-নীতিমালা উপেক্ষা করে দৃষ্টিহীন পিয়ন আহাম্মদ আলীর বেতন স্থগিতের ঘটনা শুধু অমানবিক নয়, অপরাধও বটে। জন্ম তারিখ জটিলতা দেখিয়ে ইনডেক্সভুক্ত আহাম্মদ আলীর বেতন-ভাতা বন্ধের এখতিয়ার নেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির। তদন্তে নথিপত্র পর্যালোচনায় বেতন-ভাত স্থগিতের ঘটনাটি সংশ্লিষ্টদের যোগসাজস এবং নৈতিকতা বিরোধী বলে প্রতিয়মাণ হয়। তার বেতন প্রদানে কোন প্রকার জটিলতা না থাকায় আপাতত আহম্মদ আলীকে গত নভেম্বরসহ চার মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি চলতি মাসেই বেতন হাতে পাবেন তিনি’।
অপর দিকে দীর্ঘদিনের হয়রানি পেরেশানি হওয়ার পর স্থানীয় প্রেসক্লাবের গণমাধ্যমকর্মীদের জোড়ালো ভুমিকা পালনের মধ্যদিয়ে নায্য বিচার পাওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাশীত বকেয়া বেতন পাচ্ছেন এমন খুশিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি ভুক্তভোগী দৃষ্টিহীন পিয়ন আহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী আছিয়া। এ দম্পতি এবিষয়ে বলেন, অন্যায়ভাবে ক্ষমতার জোরে ৩ বছর ধরে বেতন বন্ধের ফলে তাদের দু:খ-কষ্টে জীবন চলছে নিদারুন কষ্টে। উপজেলার প্রেসক্লাবের গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে দ্রুত বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি গোচর হওয়ায় পর তদন্ত শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীনেওয়াজ স্যারের নির্দেশ-আশ্বাসে বেতন পাওয়ার জন্য এবারেই শেষ হলো তাদের অপেক্ষা। বেতনের টাকা হাতে পেলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার আর নিজের চিকিৎসাসহ দু'চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার আশা করছেন আহাম্মদ আলী। তারা এসময় তারা মহান সৃষ্টিকর্তা নিকট শুকুরিয়া আদায় করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সম্মানিত সদস্যদেরসহ তদন্ত কাজে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের দু হাত তুলে দোয়া করেন ।
এঘটনাটির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারে’র কার্যালয়ে তদন্তের সময় উপস্থিতি ছিলেন, সাদুল্লাপুর উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি প্রভাষক আবদুল জলিল সরকার, যুগ্ন সম্পাদক এসটিএম রুহুল আমিন, সাদুল্লাপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান পলাশ, সাংবাদিক পিয়ারুল ইসলাম হুমায়ন। এছাড়া আহাম্মদের স্ত্রী আছিয়া বেগম, নাতি আতাউর, আলমগীর ও বরাখাস্তের শিকার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখিত থাকে যে,সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের উত্তর হাটবামুনি গ্রামের বাসিন্দা আহাম্মদ আলী বিগত ১৯৮৯ সালের ১৫ মার্চ কামারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নাম্বার - ৫৪৫২০৯। এরপর ২০০৩ সালের মে মাসে বেতন মঞ্জুরের পর থেকে সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত অত্র প্রতিষ্ঠান হতে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন আহাম্মদ আলী। কিন্তু গত ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়ের এক সভায় পরিচালনা কমিটির তৎকালীন কমিটির সভাপতি সুবল চন্দ্র সরকার ক্ষমতার অপব্যববহার করে তার বেতন-ভাতা স্থগিত করেন।
(এস/এসপি/ডিসেম্বর ১৪, ২০২০)