রংপুরে উন্মোচিত হলো বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য ‘আলোকবর্তিকা’
মানিক সরকার মানিক, রংপুর : ভাষ্কর্য নিয়ে দেশজুড়েই যখন এক শ্রেণির ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠির নৈরাজ্য এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী আষ্ফালন, ঠিক তখন বুধবার মহীয়সী রোকেয়া দিবসে নগরীর রোকেয়া চত্ত্বরে (শালবন ইদারার মোড়ে) নব নির্মিত ‘আলোকবর্তিকা’ নামে রোকেয়ার একটি ভাষ্কর্য উন্মোচন করা হয়েছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে এটির উন্মোচন করেন শিল্পী অণীক রেজা নিজেই।
নগরীর রোকেয়া কলেজ মোড়ে এটির স্থাপন এবং উন্মোচনে এ অঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের একটি দাবি পুরণ হলো বলেই মনে করছেন অনেকেই। আর এজন্য তারা এর উদ্যেক্তা রংপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু প্রায় তিন বছর আগে প্রায় ১৫ লাখ টাকা এই ভাষ্কর্যটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সে সময় তিনি এর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছিলেন। এটি নির্মাণের শিল্পীও নির্ধারণ করা হয়েছিল ভাস্কর অণীক রেজা নামের এক ভাষ্কর্য শিল্পীকে। অণীক রেজা সে সময়ই এর কাজ শুরু করলে একটি বিশেষ গোষ্ঠির নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন তিনি। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি এর কার্যক্রম।
অণীক জানান, বেগম রোকেয়া শুধু একজন নারী জাগরণের অগ্রদূত নন, তিনি একাধারে সুসাহিত্যক, আলোকবর্তিকা, যেন একটি প্রতিষ্ঠান তিনি এবং তিনি একটি বড় শক্তি। আর তাই তাঁর সমস্ত কিছু তুলে ধরে ভাষ্কর্র্যটির নামকরণ করেছি ‘আলোকবর্তিকা’। তার মতে. জ্ঞান বিতরণের নিমিত্তে রোকেয়ার যে চিরায়ত ছবিটা আমাদের মনে স্থান করে নিয়েছে, সেই ছবিটা, সেই রূপটা তুলে ধরার পাশাপাশি আলোকবর্তিকার একদিকে খোদাই করা আছে রোকেয়ার গুরুত্পূর্ণ কিছু উক্তি-বাণী। শুধু তাই নয়, ভাষ্কর্যটির চারপাশে রাখা হয়েছে ছড়ানো ছিটানো তাঁর বইয়ের কিছু ফর্ম, তাঁর সৃষ্ট কিছু বইয়ের নাম যেমন, ‘মতিচুর’ ‘অবরোধ বাসিনী’সহ আরও বেশ কিছু গ্রন্থের নাম। আর এর কারণ, সাধারণ মানুষজন যাতে ভার্ষ্কযটি দেখার পর তাঁর সম্পর্কে, তারঁর সৃষ্টিগ্রহ সম্পর্কে ধারণা পায় , তাঁকে জানার ব্যাপারে আগহ বাড়ে। শিল্পীর মতে, সব মিলিয়েই তার ভাষ্কর্যটি দেখে তাঁকে ধারণ করার চেষ্টা করে।
রংপুর সিটি করপোরেশন এটি নির্মাণ এবং অর্থ ব্যয়ের মূল উদ্যোক্তা হলেও দু:খজনক যে, করপোরেশনের মেয়র, কোন কর্মকর্তা, জেলা, বিভাগীয় এবং পুলিশ প্রশাসনের কোন কর্মকর্তার কেউই বুধবার এটি উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পী জানান, রোকেয়ার এই জন্ম-মৃত্যুর এই দিনেই ফলকটি উন্মোচনের এ দিনেই সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তিনি মেয়রসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদেও সাথে যোগাযোগ করলে তারা মঙ্গলবার তাকে জানান, আপনি স্থানীয় সুধিজনদেও নিয়ে উদ্বোধন করে ফেলেন, তাই আমি এদিনটিকেই বেছে নেই।
(এমএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০২০)