চড়া দামে কিনতে হবে চীনা ভ্যাকসিন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে বিশ্বজুড়ে আরও যেসব প্রতিযোগী আছে তাদের তুলনায় নিজেদের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের দাম অনেক বেশি নির্ধারণ করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। চীনা ওই কোম্পানি করোনার সম্ভাব্য দুটি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
সাংহাইভিত্তিক দৈনিক গুয়াংমিংকে চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের (সিনোফার্ম) চেয়ারম্যান লি জিনহেং জানান, তাদের তৈরি করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের দাম পড়বে প্রায় এক হাজার ইউয়ান (১৪৪ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় ১২ হাজার ২১০); যা ডিসেম্বরে বাজারে আসতে পারে।
অবশ্য সিনোফার্ম প্রধান লি জিনহেং ভ্যাকসিনের দামের ক্ষেত্রে পাইকারি নাকি খুচরা মূল্যের কথা বলেছেন, সেটি স্পষ্ট নয়। তবে তিনি যা বলেছেন তা এখন পর্যন্ত তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর দামের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।
ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং মার্কিন জনসন অ্যান্ড জনসনের মত কয়েকটি বৃহৎ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান মহামারিতে ভ্যাকসিনের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে অলাভজনক নীতি গ্রহণ করেছে এবং তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের কম মূল্যের কথা জানিয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের ব্যাপক সহায়তাও পাচ্ছে কোম্পানি দুটি।
ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে থাকা মডার্না, ফাইজার এবং মার্ক এর মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য তাদের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন থেকে অধিক মুনাফা করার আশা করছেন।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম দাম ধরা হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটির। উৎপাদন শেষে সরকারের কাছে বিক্রির সময় ডোজপ্রতি মূল্য পড়বে চার ডলার। ভ্যাকসিনটি এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ ধাপে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যে ব্রিটিশ ও ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অদর পুনাওলা বলেন, তাদের দেশে উৎপাদন হওয়া অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির দাম পড়বে এক হাজার রুপির (১৩ মার্কিন ডলার) কম।
মার্কিন কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন তাদের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রতি ডোজের দাম ১০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে এবং দেশটির সরকারকে ১০ কোটি ডোজ সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে।
মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক অনলাইন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বোরলা জানিয়েছেন, তাদের তৈরি করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটির প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে প্রায় ২০ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা।
ফাইজার জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের সঙ্গে যৌথভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করছে। তাদের তৈরি ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য কোম্পানি দুটি মার্কিন সরকারের সাথে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেছে। ফাইজার প্রধান বোরলা জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো কম পাবে দামে তাদের ভ্যাকসিন।
নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিনের কিছুটা উচ্চমূল্যের কথা জানিয়েছে আরেক মার্কিন কোম্পানি মডার্নাও। ভ্যাকসিন নিয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে কোম্পানিটি এবং তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে ৩২ থেকে ৩৭ ডলার। কম উৎপাদনের কারণে মূল্য বেশি পড়ছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
চীনা ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ টাও লিনা বলেন, সিনোফার্মের এমন মূল্য নির্ধারণে তিনি অবাক। কেননা পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি সম্ভাব্য ভ্যকসিনের তুলনায় এটি অনেক বেশি ব্যয়বহুল।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের এই মূল্য নির্ধারণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, চীন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে না। টাও এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দাম নিয়ে আমি বিস্মিত। এখন পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ হওয়া ভ্যাকসিনের মধ্যে এর দামই সর্বোচ্চ।’
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি সিনোফার্ম দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে দেশটির আরও দুটি প্রতিষ্ঠান; ক্যানসিনো এবং সিনোভাক। এ কোম্পানি দুটি এখনো তাদের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করেনি।
সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লি জিনহেং তাদের ভ্যাকসিনের দাম প্রকাশ করায় ওই দুটি ভ্যাকসিনের দামের ওপর প্রভাব পড়বে কিনা সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। সাউথ চায়না মর্নিং।
(ওএস/এসপি/আগস্ট ২০, ২০২০)