স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর : পবিত্র ঈদুল আযহার আর মাত্র ক’দিন বাকি থাকলেও এখনও তেমন জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর কেনাবেচা। করোনা দুর্যোগে অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে হাটগুলোতে। গরু কেনায় এখনও তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। হাটে সাধারণ ক্রেতাদেরও নেই তেমন ভীড়। এতে করে চরম দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে রংপুরে ৯টি অনলাইন পশুরহাট চালু করেছে প্রাণিসম্পদ দফতর। কিন্তু এসব অন লাইন হাটেও তেমন খোঁজ খবর নিচ্ছেন না ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরণের লোকসানের আশংকা করছেন অনলাইন নির্ভও খামারিরা। যদিও হাট ইজারাদাররা বলছেন ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই গরু কেনাবেচা জমে উঠবে। তবে হাটগুলোতে ক্রেতাদেও তৎপরতা চোখে না পড়লেও জেলা ও মহানগরের স্থানীয় ব্যবসায়ী, ব্যাপারি ও দালালরা হাটে হাটে আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশুর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কেউ কেউ কম দামে কিনে বেশি লাভের আশায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই হাটে গরু না নিয়ে বাড়ি থেকে বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও খামারিরা ঈদকে ঘিরে গরু মোটা তাজাকরণ শেষে এখন বিক্রির অপেক্ষা করছেন।

মহানগরীর লালবাগ এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট ও বেতগাড়ি হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত হাটে ক্রেতা ও ব্যাপারিরেদের তেমন আনোগোনা নেই। তবে কেউ কেউ হাটে এসে বাজার যাচাই করে দেখছেন। এ সব হাটে এখনও দেশি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় ভারতীয় এবং মিয়ানমারের গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগের মধ্যে সব থেকে বড় গরুর দাম উঠেছে ২৫ লাখ টাকা। তিন বছর ধরে ফ্রিজিশিয়ান জাতের এই গরুটি লালন পালন করছেন রংপুর সদরের পাগলাপীর এলাকার খামারি শহিদুল ইসলাম। তিনি তার পরম আদরের গরুটি নাম দিয়েছেন ‘সুলতান’। ঈদকে ঘিরে সুলতান ছাড়াও বেশ কিছু গরু প্রতিপালন করছেন এই খামারি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন গরু বিক্রি করতে না পারায় চরম দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন এই খামারি। তিনি জানান, সুলতানের ওজন হবে প্রায় ১৫’শ কেজি। যে কারণে এর মূল্য হাকিয়েছেন ২৫ লাখ।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত কয়েকজন ক্রেতা তার সুলতানকে দেখে ২২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম করে গেছেন। তাতেও তিনি সুলতানের গলার দড়ি হাতছাড়া করেননি। এদিকে সহিদুলের মত অনেক খামারিই এখন করোনা সংক্রমণ আর চলতি বর্ষা মৌসুমে গরু বেচাকেনা নিয়ে বেশ দু:শ্চিন্তায় আছেন। তারা বলছেন, গরু অবিক্রিত থেকে গেলে কিংবা সঠিক বাজার মূল্য না পেলে হুমকির মুখে পড়বেন খামারিরা।

রংপুর ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসিফুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন একেকটা গরুর পিছনে খাবারসহ অন্যান্য খরচ হয় ৪’শ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় যদি কোরবানীর সময় তারা সঠিক দামে গরু বিক্রি করতে না পারেন কিংবা লোকসান করে বিক্রি করতে হয়, তবে আগামিতে খামার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এখনও পশুর হাট জমে না ওঠার জন্য করোনার পাশাপাশি তারা এ অঞ্চলের অতি বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়াকেই দুষছেন হাট ইজারাদার ও বিক্রেতারা।

তবে তারা এখনও আশাবাদী, তাদের মতে, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই জমে উঠবে হাটগুলো। তখন হাটে হাটে বাড়বে মানুষের উপচে পড়া ভীড়।

নগরীর লালবাগ হাটের ইজারাদার আব্দুস সালাম জানান, কোরবানি ঈদকে ঘিরে এ মাসের শুরু থেকেই তারা গরু আমদানিসহ সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পরিচিত ক্রেতা বিক্রেতা আনাগোনা করছেন। তবে এখন তারা মূলত খোঁজখবরই নিচ্ছেন। ঈদেও সাত দিন আগে থেকেই কেনাবেচা শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি।

অন্যদিকে অন লাইন মার্কেটিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে জেলায় কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য নয়টি অনলাইন হাট চালু করেছেন তারা। তবে সেসবেও এখনও তেমন সাড়া মিলছে না।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ হাবিবুল হক জানান, করোনা সংকটে অনেক সচেতন মানুষ ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনের মাধ্যমে পশু কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমরা সংকটময় এই পরিস্থিতিতে ফেসবুক ই-মার্কেটিং পেজ খুলেছি। ‘পশুরহাট’ নামে খোলা ওই পেজটি অনুসরণ করছেন অনেকেই। সাড়াও দিচ্ছেন কেউ কেউ।

তিনি জানান, শহরের মানুষের সাধারণত পশু রাখার জায়গা না থাকায় তাদেও অনেকেই দু’একদিন আগে গরু কিনে থাকেন। এ কারণেই তারা আশাবাদী অনলাইনে কোরবানীর হাট জমে উঠবে বলে।

(এমএস/এসপি/জুলাই ১৬, ২০২০)