ট্রাকের চালক-হেলপার নাই
বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত সবজি নিয়ে বিপাকে কৃষক, উভয়েই সংকটে
মানিক সরকার মানিক, রংপুর : করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা অস্থিরতা সর্বপরি পরিবহন সংকটে সবজি প্রধান রংপুরের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বাইরে বাইরে পাঠাতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। মাথার ঘাম জলে ফেলে উৎপাদিত এসব ফসল জমিতে রেখে এবং ঘরে তুলে বসেছে। এতে করে চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে এখানকার কৃষকরা। ঘরে ঘরেদেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটেরও।
কৃষকরা জানান, রংপুর কৃষি অঞ্চলে প্রতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপন্ন হয়। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, করলাম বরবটি, টমেটো ছাড়া নানা জাতের শাকসবজি। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে একটা মুনাফা অর্জন করে লাভবান হয়ে থাকেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা পড়েছেন বিপাকে।
এসব সাব সবজি নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে গেলে তারাও কিনছেন না। কেউ আবার কিনতে চাইলেও সঠিক দাম দিচ্ছেন না। আবার নিজেরাও যদি বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে বসেন সেখানেই প্রথমত ক্রেতাশূণ্য দ্বিতীয়ত দাম নেই। রংপুর সদরের জানকি রামজীবন গ্রামের কৃষক মনজুরুল ইসলাম বলেন, সাক সবজিতো একটি নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে তোলার নিয়ম থাকে। কিন্তু নিয়মমাফিক তুলতে না পারায় এবং বেশি দিন জমিতে থাকায় তাতে পচন ধরে।
জরুরি এ অবস্থায় পণ্যবাহি গাড়ি চলাচলের উপর কোন বিধিনিষেধ না থাকলেও ট্রাক চালক হেলপারদের অভাবে মালিকারা তাদের গাড়ি বের করতে পারছেন না। মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে সারি সারি গাড়ির লাইন। কিন্তু মালিক, চালক, হেলপার কেউই নেই।
কোন কোন ট্রাক চালক জানান, আগে যেখানে ভাড়া ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন সেখানে৮/১০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। সেই সাথে মালামাল উঠানামার জন্য কাউকে জড়ো হতে দিচ্ছেন না প্রশাসন। সেক্ষেত্রে তারা কী করবেন? নগরীর সাতমাথা এলাকার আমিনুল ও নুর আলম নামের দুই ট্রাক চালক জানান, করোনার ভয়ে আসলে কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
তারাসহ আরো অনেক চালকই জানান, শুধু কৃষকরা নয়, আয় করতে না পারায় তারাও পড়েছে নানামুখি সমস্যায়। সরকারীভাবে শুধু চাল ডাল চিনি তেল দিলেইতো আর সংসারের সমস্যা মিটে যায় না।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় এবার ৩৮ হাজার, ৭’শ ৩৬ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। যা এই মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১হাজার ২৯ হেক্টও বেশি। কৃষি বিভাগের মতে, চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলার মধ্যে এবার সবচে বেশি সবজি আবাদ হয়েছে রংপুর কৃষি অঞ্চলে।
(এম/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০২০)