স্টাফ রিপোর্টার : মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাস কাঁপিয়ে দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। গত ৮ মার্চ এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশেও। এতে দেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ জন, মারা গেছেন দুইজন। পরিস্থিতির লাগাম এখনই টেনে ধরতে না পারলে অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কিত চিকিৎসকরা।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানালেও তাদের পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।

শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাতের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

“মৃত্যুর বিরুদ্ধে মানুষের শেষ যুদ্ধের একমাত্র সৈনিক তার ডাক্তার। সেই যুদ্ধের পরাস্ত ব্যক্তির শেষ নিঃশ্বাসের তীব্র কষ্টের সময় কেউ পাশে থাকবে না। থাকবে শুধু ওই ডাক্তার – যাকে কারণে অকারণে আপনারা কসাই ডাকেন, অভিশাপ দেন – মাঝে মাঝে গায়ে হাতও তোলেন। অথচ, শুধু এবার নয় – চিকিৎসাধীন সব মৃত্যুর ক্ষেত্রেই এই কথাটা সত্য যে, শেষ যে মুখটি আকুল হয়ে আপনাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে তা কোনো একজন ডাক্তারেরই। ডেল্টা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজেই লড়ছেন বাঁচার লড়াই। তার জন্য আপনাদের সহানুভূতি যথার্থ। খালি এর পরে কোনো ডাক্তারের গায়ে হাত তোলার আগে মনে রাখবেন এই ডাক্তারের কথা। নিজের হাতকে, মুখকে সামলে নেবেন শেষ নিঃশ্বাসের সময় যেই ডাক্তারের সাথে দেখা হবে – তার সম্মানে – এটুকুই শুধু অনুরোধ। বলে কী লাভ? ডেঙ্গুর সময়ও বেশ কিছু ডাক্তার মারা গেয়েছেন- কে মনে রেখেছে? ঢাল নেই, তলোয়ার নেই পাঠিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধে। ডাক্তাররা সেবার ব্রত নিয়েছেন তা নিশ্চয়। তাই বলে, আপনার জন্য আত্মহত্যা করার প্রতিজ্ঞা তো করেননি, তাই না? কী মনে করেন? সব সৈনিক যদি একে একে পড়ে যায়, যুদ্ধ করবেন কাকে নিয়ে? আপনার শেষ যুদ্ধের যোদ্ধার সুরক্ষার জন্য সকলে দায়িত্বশীল হন।”

“কর্তৃপক্ষের উচিৎ নয় নির্দিষ্ট সুরক্ষাকারী পোশাক ছাড়া ডাক্তারদের এমন রোগী দেখতে বাধ্য করা। ডেল্টা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ অন্যায় করেছেন। আর জনসাধারণের কাছে দাবি – স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে উপসর্গগুলো – সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাস কষ্ট – এগুলোতে ভুগছেন এমন রোগীদের করোনার জন্য করে দেয়া নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলি ছাড়া আর কোথাও নিয়ে যাবেন না। আবারও বলছি, জীবন-মরণের এই যুদ্ধের মূল যোদ্ধা ডাক্তারদের সুরক্ষা দিন। না হলে কারও শেষ রক্ষা হবে না।”

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৩, ২০২০)