রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ছোটকালে অভাবের কারণে প্রাইমারী স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের তুজুলপুর গ্রামের মৃত ইসহাক মোড়লের ছেলে ইয়ারব হোসেন। ইতিমধ্যেই অভাব ঘুচেছে । তাই গত বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সাধ জাগে ইয়ারবের। কিন্তু বিধি বাম হওয়ায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি বাংলা ও ইংরাজীতে। তাই গত ২৪ জানুয়ারি কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি হলে জানালার পাশে বসে  বাংলা পরীক্ষা দেন তিনি। তবে ইয়ারবের মত কয়েকজন পরীক্ষা হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজস করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা দিয়েছেন পাস করার জন্য।

একই বেঞ্চে সিট পড়া এক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, ইয়ারব হোসেন প্রভাব খাটিয়ে বাংলা বইয়ের গাইড দেখে খাতায় লিখেছেন। জানালার পাশে হওয়ায় এক শুভাকাঙ্খীকে দিয়ে দু’টি প্রশ্নের উত্তর লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকগণ নীরবতা পালন করেছেন। এরপরও ইয়ারব হোসেন পাস করবেন কিনা জানেন না। কারণ ‘ক’ লিখতে যার কলম ভেঙে যায় সে পাস করবে কিভাবে! আগামি ৬ মার্চ শুক্রবার তার ইংরাজী পরীক্ষা।

স্থানীয়রা জানান, চল্লিশ লাখ টাকার বাড়ি বানাননোর পাশপাশি ঝাউডাঙা বাজারে কয়েকটি দোকানের ব্যবসায়িক অংশীদার ইয়ারব হোসেন। কয়েকটি ব্যাংকে রয়েছে রাশি রাশি টাকা। কমপক্ষে চার কোটি টাকার মালিক তিনি। তবে আয়ের উৎস্য নিয়ে দুদক ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তুজুলপুর গাঠের পাঠশালার পরিচালক হিসেবে পরিচিতি তার কম নয়। কিন্তু সাংবাদিক হওয়ার আকাঙ্খা তার দীর্ঘ দিনের।

এজন্য তিনি অন্যের এসএসসি সার্টিফিকেট ফটোকপি করে বিশেষ কায়দায় সত্যায়িত করে জমাও দিয়েছেন মানবজমিনে। এরপরও বদনাম ঘোচে না। এবার তিনি ফেল করতে চান না। তিনি পরীক্ষার সময় বাংলা বইয়ের গাইড রেখেছিলেন সঙ্গে। তবে আগামি ইংরাজী পরীক্ষায় যাতে তিনি গাইড বই বা কোন ধরণের উত্তরপত্র সঙ্গে না রাখতে পারেন সেজন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

জানতে চাইলে ইয়ারব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে। তিনি শিক্ষার মর্যাদাকে সর্বোচ্চ আসনে বসাতে চান।

জানতে চাইলে কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট মাধ্যমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি আব্দুর রহমান জানান, ইয়ারব হোসেন গত ৭ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার বিকেলে বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। তিনি বিজ্ঞানে ফেল করেননি এমনটি অবহিত করানোর পর তিনি হল ছেড়ে চলে যান। তবে ছবিটি ভাল কওে না দেখে তিনি কোন মন্তব্য করতে চান না।

কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সমন্বয়কারি মোঃ আব্দুর রব বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে ইয়রাব গাইড বই বা উত্তরপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে এটা তার জানা নেই। যারা হল পরিদর্শক তারাই বলতে পারেন। যদি কেউ তাকে গাইড বই নিয়ে পরীক্ষা দিতে সহযোগিতা করে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ছবিতে যে কক্ষে পরীক্ষা দেখানো হয়েছে তাতে এবার পরীক্ষা হয়নি। কিভাবে তারা সেখানে বসলো তা খতিয়ে দেখতে হবে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০)