১৫ আগস্ট, ১৯৭১
'শেখ মুজিব দেশ ও জাতির শত্রু'
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা পাকসোদের রসদ বোঝাই দু‘টি নৌকাকে ব্রাহ্মণপাড়া থেকে নয়ানপুর যাবার পথে অতর্কিত আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর রসদ বোঝাই নৌকা দু‘টি বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে ডুবে যায় এবং ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়।
কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনীর একটি সম্মিলিত দল হোমনা থানার ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। থানার ভিতরে অবস্থিত পাক পুলিশ ও সেনারা আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু দ‘ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ১০ জন সৈন্য নিহত হয় ও ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়।
সন্ধ্যায় মেজর আবু তাহেরর নেতৃত্বে ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ময়মনসিংহে পাকহানাদার বাহিনীর কামালপুর ঘাঁটির ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। দু‘ঘন্টা স্থায়ী এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ১৫/১৬ জন সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর ১৫ জন যোদ্ধা আহত হয়।
মার্কিন সিনেটের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত সাব-কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিংয়ের সাথে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ও শরণার্থী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী লন্ডনে বলেন, যারা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন তারা মীর জাফরের মতোই ভুল করছেন। মীর জাফর বাংলার স্বাধীনতা বিকিয়ে দিয়েছিল।
পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের মহাসচিব উ‘থান্টের বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিব দেশ ও জাতির শত্রু। তার বিচার সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। শেখ মুজিবের বিচারে নাক গলিয়ে জাতিসংঘ তার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
’স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত কথিকামালা বিশ্বজনমত :
...........গত ২৫ মার্চ থেকে ইয়াহিয়ার বর্বর সামরিক চক্র বাংলাদেশে যা করেছে সমস্ত বিশ্ব তাতেই হতবাক হয়েছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উ‘ থান্ট বর্ণিত মানব ইতিহাসের সেই সর্বাধিক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনার পর এবং মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বর্ণিত মানব ইতিহাসের বৃহত্তম বিপর্যয় সৃষ্টির পর ইয়াহিয়ার বর্বর সেনাবাহিনীর বর্তমান বাংলার নয়নমণি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মিথ্যে অভিযোগ এনে সামরিক আদালতে বিচার প্রহসন শুরু করেছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মিঃ ট্রুডো পাকিস্তানের জঙ্গি প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে এক তারবার্তায় শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এর পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর হবে।
............‘টাইমস’ পত্রিকায় প্রখ্যাত বৃটিশ আইনজীবী ডাবলিউ.টি. উইলিয়ামের একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। চিঠিতে উইলিয়াম বলেছেন, যেভাবে সামরিক আদালতে শেখ মুজিবের গোপন বিচার প্রহসন শুরু হয়েছে তাতে তিনি ও বিশ্বের বিবেকবান সকল মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, পাক সামরিক চক্র মূঢ়তার বশে মিথ্যা অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে যদি কোন রকমের দন্ড দেয় তাহলে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মিথ্যা অভিযোগে তুলে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসন শুরু করে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা এক মারাত্মক ভুল করেছে। পাকিস্তান সামরিক জান্তা যদি এই তথাকথিত বিচারে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণদন্ড দেয় তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে মারাত্মক ভুল। আর সেই ভুল সংশোধনের কোন পথ থাকবে না।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/এএস/আগস্ট ১৫, ২০১৯)