রক্ত পরীক্ষার যন্ত্র বিকল, বিপাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
রংপুর মেডিকেলে ডেঙ্গু আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে
মানিক সরকার মানিক, রংপুর : রংপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। সোমবার পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন রংপুরের গঙ্গাচড়ায় একজন অপরজন নীলফামারীর সৈয়দপুরে। আর বাকীরা সকলেই ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত করার কোন ব্যবস্থা নেই। তাদেরকে নগরীর বিভিন্ন রোগ নির্ণয় সেন্টারে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. দেবেন্দ্র নাথ সরকার জানান, হাসপাতালে কিছু সমস্যাতো আছেই। যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা হাসপাতালে হয় না, তা বাইরের নির্ণয় কেন্দ্র থেকে করিয়ে আনতে হয়।
তিনি জানান, গত ১৯ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই বিকেল পর্যন্ত এই ৩৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি করা হয়। তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় রেখে রোগিদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। আর যেসব রক্ত পরীক্ষা হাসপাতালে সম্ভব হচ্ছে না তাদেরকে বাইরের রোগ নির্ণয় কেন্দ্র থেকে করিয়ে আনা হচ্ছে। তবে সবকিছু মিলে আতংকিত হবার কিছু নেই বলেও জানান তিনি।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিসিন বিভাগের পাঁচটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের প্রয়োজনমত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে হাসপাতালে রোগীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পেয়িং বেড খালি করে রোগিদের রাখা হয়েছে। মেডিসিন বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবুল কাশেম জানান আক্রান্ত রোাগদের বেশির ভাগ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং কিংবা চাকরি করতেন।
সেখান থেকে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে এসে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। রোগিদের স্বজনরা জানান, ঢাকায় থাকা অবস্থায় তাদের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস শণাক্ত করা হয়। পরে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর রংপুর মেডিকেলে নিয়ে আনা হয়। তারা হাসপাতালে জ্বর শনাক্ত করার পরও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছেন না। চিকিৎসকরা বিকেলের পর রোগীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন না। নার্স এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা.সুলতান জানান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ডেঙ্গু শনাক্তের বিষয়টি নিয়ে তাদের খানিকটা সমস্যায় পড়তেই হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষার যেসব যন্ত্র নিয়ে সমস্যা আছে, তা বাইওে থেকে করিয়ে এনে সমস্যা মেটানো হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবায়ও কোন ঘাটতি হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সোমবার থেকে ফগার মেশিনের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মশক নিধনের ওষুধ ছিনানো হচ্ছে।
রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, মহানগরীতে বর্তমানে এডিস মশা কিংবা ডেঙ্গু নিয়ে আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। রংপুরে ডেঙ্গু নাই বললেই চলে। ঢাকায় আক্রান্তরাই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু আমরা রংপুর সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের বিভিন্ন ক্যানেলে অথবা এটার লাভা যেখানে ছড়াতে পারে, সেই জায়গা গুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ আরো জোরদার করেছি। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ২শত কর্মী সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলার আট উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সজাগ আছি। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসার কোন ত্রুটি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
(এম/এসপি/জুলাই ২৯, ২০১৯)