রংপুর নগরীর নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী
বিপদ সীমার ৩৭ সে.মি উপর স্তিস্তা ব্যারাজের পানি
মানিক সরকার মানিক, রংপুর : কখনও হালকা কখনও ভারি আবার টানা বর্ষণে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা নদীতে স্মরণকালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বৃহৎ এই তিস্তা ব্যারাজের পানি বৃদ্ধির ফলে এর আশাপাশেরসহ বিভিন্ন এলকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একদিতে বৃষ্টির পানি অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারেজের পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও তিস্তার অন্যান্য পয়েন্ট কাউনিয়া, ডালিয়াসব পয়েন্ট পানি বৃদ্ধির ফলে ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তাসহ অন্যান্য নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধিসহ সব পয়েন্টেই পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতীরবর্তী ও তীরাঞ্চল ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার পরিবারের মানুষজন। এদিকে মহানগরীর আমাশু কুকরুল এলাকার ব্রীজটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার মানুষজনকে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে পারাপার করছে তারা।
এদিকে অব্যহত পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে বিভিন্ন ঘরবাড়ি গাছপালাসহ আবাদী। পানি বৃদ্ধিও কারণে ছোট খাট ব্রীজ কলভার্ট গুলো ভেঙ্গে পড়ায় স্থানীয় প্রশাসন ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে চরাঞ্চল এলাকায় যাবেন তারও উপায় নেই।
ডালিয়ার অবস্থিত পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী মেহেদী হাসান জানান, ডালিয়া পয়েন্টে সর্বচ্চো পানি উঠানামা করছে ৫২ দশমিক ৬০ পয়েন্টে। বর্তমানে ডেঞ্জার পয়েন্টের স্থলে বর্তমানে সেখানে ৫২ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে পানি উঠানামা করছে। অর্থাৎ ডেঞ্জার লেবের ৩৭ পয়েন্ট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা কাউয়ার ২৯ দশমিক ৯ পয়েন্টের স্থলে ২৯ দশসিক ২০ পয়েন্ট উপর দিয়ে পানি উঠা নামা করছে।
তাদের মতে, বৃষ্টি আর দু’চারদিন লাগাতার হলে ভয়াবহ বন্যার আশংকা দেখা দিতে পারে। এদিকে কখনও ভারি কখনও হালকা বৃষ্টিপাতের কারণে গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে থাকায় চলাচলে মারাত্মক সমস্যার মুখে পড়েছে স্থানীয়রা।
এছাড়াও নগরবাসীরা ঘর ছেড়ে বের হতে পারছেন না। সবকিছু মিলিয়ে বৃষ্টিপাতের কারণে এক ধরণের স্থবিরতা নেমে এসেছে নগরবাসীর মাঝে। সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার চরের ১৫ টি গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেখানকার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল বেরিবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
এছাড়া একই উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, চর ইসলী, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, চর মুটুরকপুর, নোহালী ইউনিয়নের বাঘডোহরা, চর নোহালী, কচুয়া এলাকার প্রায় ৫’শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু জানান, তার ইউনিয়নের বিনবিনিয়ার চর এলাকায় ৭০ পরিবার এখনও পানিবন্দী। তিনি জানান, দুর্গত মানুষদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন।
এদিকে একই অবস্থা জেলার কাউনিয়া, পীরগাছাসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন চর এবং নিম্নাঞ্চলের। কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ পনি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার ইউপির বিশ্বনাথ, চর গনাই, হয়বত খা,চরগনাই, ঠুসমারার চর, বালাপাড়াসহ কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। অনেক এলাকার স্কুল মাদ্রাসার মাঠে পানি জমে থাকায় সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় বিঘ্নিত ঘটছে।
লক্ষীটারী ইউনিয়েনর চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে পাওয়ায় ইউনিয়নের বিভিন্ন চর এলকার অন্তত ১০ হাজার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ছোটখাট বহু ব্রীজ কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে। তাদেরকে ত্রান সহায়তা দিতে যাবেন এ অভস্থা সেখানে নেই। এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন চরাঞ্চলের আবাদী জমি ও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি গবাদি পশু ও হাস মুরগি নিয়ে চরম আশংকা করছেন কষক-গৃহস্থরা।
(এম/এসপি/জুলাই ১৩, ২০১৯)