দফতরে আসেননি ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ
স্টাফ রিপোর্টার : নিজ দফতরে আসেননি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। বুধবার সকাল থেকে তার দফতর খালি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
শিক্ষকরা জানান, প্রতিদিন সাধারণত সকাল ৮টার মধ্যে তিনি (অধ্যক্ষ) নিজ দফতরে আসেন। তবে আজ এখনও আসেননি।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র শিক্ষিকা ও গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা বলেন, ‘উনি আজ আসেননি, কেন আসেননি আমরা জানি না।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গ্রেফতার এড়াতেই নিজ দফতরে আসেননি অধ্যক্ষ।
এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ডক্টর মো. ইউনুছ আলী আকন্দ প্রতিষ্ঠানটির বেইলি রোডের মূল শাখার বাইরে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি গতকাল গভর্নিং বডিকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বরখাস্ত করতে, তবে তারা তা করেনি। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার এখন পুলিশ কাস্টডিতে অথবা সাসপেন্ডেড অথবা জামিনে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী’ হিসেবে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা। মামলার আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা।
এ ছাড়া ওই ঘটনায় ভিকারুননিসার শিক্ষক আতাউর রহমান, খুরশিদ জাহান এবং গভর্নিং বডির সদস্য ফেরদৌসী বেগমকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর) ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উভয় কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রীতিশ কুমার সরকারকে নিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে অরিত্রি অধিকারী কেন আত্মহত্যা করেছে এর কারণ খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিতে একজন অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী এবং বিচারক থাকবেন। তারা অরিত্রি আত্মহত্যার ঘটনা এবং সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম ঘটনা তদন্ত করে কারা দায়ী এগুলো খুঁজে বের করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেবেন।
অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি দেয়ার) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এ অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
(ওএস/অ/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮)