১৬ জুলাই, ১৯৭১
মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় তিন নৌকা বোঝাই পাক সৈন্য নিহত হয়
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের এক সমাবেশে বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে আমাদের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের আরেকটি আম্রকাননে দাঁড়িয়ে আমরা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।
পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা মনে রাখবেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পরাজিত হবার জন্য রণক্ষেত্রে অস্ত্র ধারণ করেনি। আমাদের বীর সন্তানেরা জয়লাভ করার জন্যই অস্ত্র ধারণ করেছে। জয় আমাদের হবেই আপনারা জেনে রাখুন, যেখানে বিশ্বের জনমত আপনাদের পক্ষে সেখানে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবেই। আমাদের মহান বন্ধু প্রতিবেশী ভারত বর্ষ আমাদের ৬০/৭০ লাখ শরণার্থীকে কেবল আশ্রয়ই দেয়নি, আমাদের দাবির নায্যতাকে স্বীকার করে নিয়ে আমাদের সাহায্য করার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন। সেজন্য ভারত সরকারের কাছে আমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বল্লাতে আটকে পড়া সৈন্যদের উদ্ধারের জন্য পাকবাহিনী ৫টি নৌকায় সৈন্য ও বিপুল অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই করে অগ্রসর হলে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা চারান নামক স্থানে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। আকস্মিক আক্রমণে পাকসেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাকবাহিনীর তিনটি নৌকা বিধ্বস্ত হয়ে নদীতে ডুবে যায়। ফলে নৌকা তিনটির সকল পাকসৈন্য নিহত হয়।
অপরদিকে, নদীর তীরে হেঁটে আসা পাকসেনারা পালাতে শুরু করলে বল্লায় অবস্থানরত পাকবাহিনী তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা মনে করে প্রচন্ড গুলি বর্ষণ ও মর্টারের শেলিং করে। এতে বহু সংখ্যক পাকসৈন্য নিহত হয়। বল্লার এই ঘটনায় পাকবাহিনীর মোট ৫১ জন সৈন্য নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হয়।
মুন্সিগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির সদস্য খলিলুদ্দিন শিকদার মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অভিযানে নিহত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল বারি ও ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডঃ আমিরুল ইসলামকে যথাক্রমে ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম রাজশাহীতে বলেন, পাকিস্তানের সংহতি রক্ষা করার জন্যই কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশ থেকে রাষ্ট্রবিরোধীদের নির্মূল করার জন্য এখন দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে একত্রিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) নিজেদের শক্তি নেই, তারা হিন্দুস্থানের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে স্বাধীন হতে চায়। হিন্দুস্তানী ফৌজ এদেশ দখল করলে তাদের অধীনতা থেকে স্বাধীনতা লাভ করা কিভাবে সম্ভব?
মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দিন আহমদ বরিশালে স্বাধীনতা বিরোধীদের সভায় নির্দেশ দেন কঠোর হাতে দুস্কৃতকারী মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করার।
স্বাধীনতা বিরোধীরা দেওভোগ আলমাস আলীর নেতৃত্বে ‘রক্ষিবাহিনী’ নামে একটি ঘাতক বাহিনী গঠন করে।
রাজশাহীর গোগরা বিলে রাজাকার ও সশস্ত্র দালালরা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ঘাতকদের অমানুষিক নির্যাতনে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হককে আটক করে হানাদারদের হাতে তুলে দেয়।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/অ/জুলাই ১৬, ২০১৪)