আত্রাইয়ে কালি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর : আ. লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৬
নওগাঁ প্রতিনিধি : শুক্রবার দিনগত গভীর রাতে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রত্যন্ত বড়কালিকাপুর (ভাটোপাড়া) গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কালিমন্দিরের কালি প্রতিমাসহ সমুদয় প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বড়কালিকাপুর কালিমন্দিরে এমন ঘটনা ঘটেছে।
দুর্বৃত্তরা মন্দিরে প্রবেশ করে কালি প্রতিমাসহ মহাদেব, ডাকিনী-যোগিনীসহ ৫টি প্রতিমার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভাংচুর করে। এমন ঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পার্শ্ববর্তী রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মেরিয়া গ্রামের মৃত লোকমান প্রামানিকের পুত্র মোঃ শহীদুল ইসলাম প্রামানিক (৪৬)সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে আত্রাই থানার পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলো, বড়কালিকাপুর গ্রামের মৃত আলেম উদ্দিনের পুত্র মোঃ স্বপন(৩৭), একই গ্রামের আবু জাহিদ খন্দকারের পুত্র মোঃ রতন খন্দকার (৩৩), রানীনগরের মেরিয়া গ্রামের মৃত নাজমুল হুদার পুত্র মোঃ পলাশ খান (২৫), একই গ্রামের শহীদুল ইসলামের পুত্র মোঃ রনি ইসলাম (১৮) ও আফজাল প্রামানিকের পুত্র মোঃ কামাল প্রাং(৩২)। এরা সকলেই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উক্ত শহীদুল ইসলাম একসময় বিএনপির ক্যাডার ছিল। বিগত ২০০৪ সালে বাংলাভাইয়ের জেএমবির জঙ্গী তৎপরতার সময় সে ছিল সক্রিয় কর্মী। পরবর্তীতে ২০০৮ সাল নাগাদ সে আওয়ামীলীগে যোগ দেয়। আওয়ামীলীগে যোগদানের পর থেকে সে যেন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরসহ বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাকে গ্রেফতারের পর তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা কিছু নেতা নামধারী দলবলসহ শহীদুলকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যাপক তদ্বিরের পাশাপাশি পুলিশের ওপর চাপও প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মফিজ উদ্দিন প্রামানিক ও আত্রাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নৃপেন্দ্র নাথ দত্ত দুলাল উক্ত শহীদুলের বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, রাতের আঁধারে কে বা কারা প্রতিমা ভেঙ্গেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী নিরাঞ্জন প্রামানিক জানান, আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী এই কালি মন্দির। এখানে সকাল-সন্ধ্যা পূজা দেয়া হয়। শুক্রবার রাতে পূজা শেষে সকলে বাড়িতে চলে যায়। রাতের অন্ধকারে মন্দিরে প্রবেশ করে কালি প্রতিমাসহ তার সঙ্গে থাকা সকল দেবতার মাথা ভাংচুর করেছে তারা।
শনিবার সকাল ৫টার দিকে স্থানীয়রা মন্দিরের প্রতিমাগুলো ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। খবর পেয়েই নওগাঁর পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন ও আত্রাই থানার ওসিসহ পুলিশ ওই মন্দির পরিদর্শন করে ।
এ ব্যাপারে আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোবারক হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের খবর পেয়েই আমরা সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি মন্দিরের কালি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে আমরা স্থানীয় মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করার পর প্রাথমিক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ওসি আরো জানান, এঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। নওগাঁর পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন জনকন্ঠকে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উল্লেখিত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
(বিএম/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৭)