লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
সুপ্রিয় সিকদার : ফরিদপুরের ছেলে তাজুল ইসলাম লিখন। পরিবার ও বন্ধুরা লিখন নামেই ডাকেন। এখন থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। ডিপ্লোমা পড়া অবস্থায় ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমান লিখন। সেখানে কাজ ও পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ৫ বছর পর দেশে ফেরেন। এর মধ্যেই হারান বাবা-মা দুজনকেই।
দেশে ফিরে উদ্বোধন করেন ‘ড্রিম ভ্যান’। প্রথমে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে কলেজ ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, সানগ্লাস, স্যান্ডেল, টি-শার্ট ও ক্যাপ বিক্রি করছেন। বিক্রি করেছেন দামি ও অভিজাত ক্যাকটাসও।
লিখন এখন তাঁর ড্রিম ভ্যানের মাধ্যমে রুটি-কলার দামে সাধারণ মানুষকে ‘জগা খিচুড়ি’ খাওয়াচ্ছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে ব্যাংক আল-ফালাহ এর সামনে ড্রিম ভ্যান নামে একটি ভ্যানে করে দুপুরে এই ‘জগা খিচুড়ি’ স্বল্পদামে বিক্রি করছেন তিনি। ৫ বছর ফ্রান্সে রাঁধুনি হিসেবে কাজ করা মোহাম্মদ নুরু দেশে ফিরে এসে এই সুস্বাদু জগা খিচুড়ি রান্না করছেন বলে জানান লিখন ফেরিওয়ালা। তিনি আরো জানান, দুপুর ১টায় দোকান খোলার পর বর্তমানে এক ঘণ্টার মধ্যেই জগা খিচুড়ি বিক্রি করা শেষ হয়ে যায়। ভিড় বেশী থাকায় লাইন ধরে টিকেট বিক্রি করতে হয়। অনেকে এসে খিচুড়ি খেতে না পেরে ঘুরে যায়।
লিখন জানান, তার কাছে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ দুপুর বেলা কলা-রুটির দামে জগা খিচুড়ি পেট ভরে খেতে পারছেন। ৩০ টাকায় জগা খিচুড়ি, ৪৫ টাকায় ডিম খিচুড়ি আর ৬০ টাকায় চিকেন খিচুড়ি বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তিনি।
এই যুবক বলেন, ‘বর্তমানে এক প্লেট সাদা ভাত-ভর্তা খেতে গেলেও ২০-৩০ টাকা লাগে। কিন্তু খাওয়ার পরেও ক্ষুধা মিটে না। সেখানে আমি নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত সবার জন্যই ৩০ টাকায় জগা খিচুড়ি বিক্রি করছি। আমার খিচুড়ি খেয়ে ক্ষুধা মিটে সবারই।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা রুটি-কলা খেয়ে দিন পার করে তাদের স্বল্পমূল্যে জগা খিচুড়ি খেতে দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোও আমার এই দোকান দেয়ার উদ্দেশ্য।’
ধনী-গরীবের বিশাল ব্যবধান দূর করতে এই দোকান ভূমিকা রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জগা খিচুড়ি খেতে দুপুর বেলা উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষজন থেকে খেটে খাওয়া মানুষজনও টোকেন নিয়ে এক লাইনে দাড়িয়ে খিচুড়ি খায়। তখন ধনী-গরীবের কোনো বৈষম্য থাকছে না। একজন খেটে খাওয়া মানুষ যে খাবার খাচ্ছে, একজন চাকরিজীবীও সেই খাবার খাচ্ছে।’
কোনো কাজই ছোট না জানিয়ে লিখন বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ড্রিম ভ্যানে করে এই জগা খিচুড়ি বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষজন জগা খিচুড়ি স্বল্প দামে খেতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘জগা খিচুড়ি বিক্রি করে বর্তমানে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। যখন বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জগা খিচুড়ি বিক্রি শুরু হবে তখন লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
(এসএস/অ/নভেম্বর ১৮, ২০১৭)