নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরের মিরাট ইউনিয়নের ৩টি সুইস গেটে এবং উপজেলার রতনদাঁড়ার একাধিক স্থানে অবৈধ ভাবে নিষিদ্ধ সুতি জাল দিয়ে নিধন করা হচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ। এতে করে মুক্ত জলাশয় থেকে বিভিন্ন প্রজাতির এসব মাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকার কৃষক। এই সুতি জালের কারণে বন্যা পরবর্তি সময়েও বিল এলাকার মাঠের জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় আবাদ করতে পারছেন না এলাকার কৃষকরা। দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতাদের ছত্র-ছাঁয়ায় অবৈধভাবে নিষিদ্ধ এই জাল দিয়ে মৎস্য নিধন করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একেবারেই নীরব।

জানা গেছে, উপজেলার মিরাট ইউনিয়নটি হলো খাল ও বিল অধ্যুষিত এলাকা। এই ইউনিয়নের অধিকাংশ বাসিন্দারা মৎস্যজীবী। তারা এই সব মুক্ত খাল-বিল জলাশয় থেকে মাছ আহরন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও মৎস্য অফিসের সঙ্গে আঁতাত করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তিনটি সুইস গেটে অবৈধ ভাবে অন্তত ১২টি নিষিদ্ধ সুতি জাল দিয়ে মাছ নিধন করে আসছে। এতে করে মুক্ত জলাশয় থেকে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। এই জাল দিয়ে কোন প্রকারের মাছ বের হতে পারে না। তাই স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মুক্ত জলাশয় থেকে আগের মতো তেমন আর মাছ পায় না। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। স্থানীয়রা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় এই সাধারন মৎস্যজীবীরা তাদের কাছে জিম্মি। অপরদিকে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সদর ইউনিয়নের রতনদাঁড়ার একাধিক স্থানে দীর্ঘদিন যাবত এই নিষিদ্ধ সুতি জাল দিয়ে মৎস্য নিধন অব্যাহত রয়েছে।

মিরাটের ২নং সুইস গেটের সুতি জালের মালিক মেছের চাঁন জানান, এলাকার রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় মানুষ ও মৎস্যজীবীসহ প্রায় ২শ’ মানুষ এই সুতিজালের অংশীদার। আমি শুধুমাত্র মাছ তোলার মালিক। প্রতিদিন আমাদের কাছ থেকে মৎস্য অফিস থেকে শুরু করে অনেক কর্মকর্তারা এসে উপঢৌকন হিসাবে মাছ নিয়ে যায়। মাঝখান থেকে আমরা কিছু মাছ পেয়ে থাকি। ৩নং সুইস গেটের সুতিজাল পরিচালনাকারী মোঃ আজিজুল ইসলাম জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এই সুতি জালের মাছ নিয়ে যান। তাই তাদের অনুমতি সাপেক্ষে আমি এই সুতি জাল পরিচালনা করে আসছি। প্রতিদিন বিভিন্ন অফিস থেকেও স্যারেরা এসে মাছ নিয়ে যান।

মিরাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সাহার আলী সরকার ও অন্যান্য সদস্যরা জানান, অবৈধভাবে জোর করে এই সব জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মুক্ত জলাশয় থেকে দিন দিন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মুক্ত জলাশয় থেকে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। তাই অনেকেই পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা কোন মতে টিকে আছি। কোন স্থানে অভিযোগ দিয়ে আমরা লাভ পাই না। আমরা এসব প্রভাবশালী মানুষের হাতে জিম্মি।

রবিবার এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জনকন্ঠকে জানান, এদিন বিষয়টি জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসব নিষিদ্ধ সুতি জালে মৎস্য নিধন কঠোর হাতে দমন করবেন বলে সভায় উল্লেখ করেছেন।

(বিএম/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০১৭)