E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, আয়োজনে নেই আওয়ামীলীগ!

২০১৭ মার্চ ২৩ ২১:০৬:৫৩
ফরিদপুরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, আয়োজনে নেই আওয়ামীলীগ!

বিশেষ প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুকন্যা, আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুরে যাচ্ছেন আগামী ২৯ মার্চ। ফরিদপুর সদর আসনের এমপি ও এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশনায় চলছে আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফরিদপুরে অভ্যর্থনা জানানোর নানা আয়োজন।

সেই আয়োজনে মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলজিআরডি মন্ত্রীর ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। তাদের সহযোগিতা করছেন এলআরডি মন্ত্রীর জামাই ও সিরাজগঞ্জের এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত। আওয়ামীলীগ সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার সাহসী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফরিদপুর যাওয়াকে কেন্দ্র করে দারুণ ব্যস্ত একটি বিশেষ চক্র, যাদের নেতৃত্বে আছেন শ্বশুর-জামাই-চাচা শ্বশুর। জেলা আওয়ামীলীগের এক বিশিষ্ট নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, দলের প্রধান নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর ফরিদপুর সফর সফল করতে এখানে গঠন করা হয়েছে দলীয় ১৩ টি কমিটি; অথচ জেলা আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতা কর্মীরা কিছুই জানেন না। তিনি আরও যোগ করেন, ওই কমিটিগুলো বাস্তবে পকেট কমিটি। ওই কমিটিগুলোতে আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতা কর্মীদের রাখা হয়নি; এমনকি দলীয় সভাপতির ফরিদপুর সফর সফল করতে তাঁদেরকে ডাকাও হয়নি। যদিও একটি কমিটিতে নামমাত্র তাঁকে রাখা হয়েছে।

ওই আওয়ামীলীগ নেতা আরও বলেন, ১৩ কমিটিতে ফরিদপুর জেলার অন্য এমপি ও দলের ত্যাগী নেতাদের নাম না থাকলেও, অভ্যর্থনা কমিটির ১ নম্বরে আছেন সিরাজগঞ্জের এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত, যিনি এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের মেয়ে জামাই ও খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের ভাতিজি জামাই। অথচ ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিপুল ঘোষ, এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার, নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, সৈয়দ কবিরুল আলম মাও,আয়মন আকবর চৌধুরী,খলিফা কামাল উদ্দিন, সমীর বোস,মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মঞ্জুর আলী,শাহাবুদ্দিন আহমেদ সাবু, শহীদুল ইসলাম নিরু, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, নাজনীন হায়দার,মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান খান, এ কে আজাদ, শাহ আলম মুকুল,মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, মনিরুল হাসান মিটু,আইভি মাসুদ, ফারুক হোসেন, মাসুদুল হক মাসুদ, নজরুল হাসান ডেভিড, লিয়াকত হোসেন মোল্লা,আমিনুল ইসলাম রিপন,খলিলুর রহমান মজনু, সাইফুল ইসলাম নিলু, জিয়াউল হাসান মিঠু,এডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল, মনিরুজ্জামান মনির,মমিতুল হাসান বিভুল, আসম মিজানুর রহমান মঞ্জু,আনম হাফিজুর রহমান ঝিল্লু, রাশেদুজ্জামান রেশাদ, দেবাশীষ বাবু, মোশাররফ হোসেন সবুজ,নাদিম হোসেন, শহিদুল ইসলাম বুলু, অরুণ মণ্ডল, তাপস সাহা, জামাল উদ্দিন কানু প্রমুখ ত্যাগী নেতাদের নাম নেই দলীয় সভানেত্রীকে বরণের এই আনন্দ আয়োজনের ১৩ কমিটির কোনটিতেই।

আওয়ামীলীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সফর সফল করতে ফরিদপুরে যে ১৩ কমিটি, এক নেতার ভাষায় যে পকেট কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে, তাতে মোট ৬৬ জনের নাম রয়েছে। কিন্তু একজনের নাম একাধিক কমিটিতে থাকায় বাস্তবে সেই সদস্য সংখ্যা ৫৩। এই ৫৩ জনের মধ্যে আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট খোকন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খোকন রাজাকারের ভাগিনা, বিএনপি ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন বরকত ওরফে চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম ও তার আপন ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রুবেলের নামও রয়েছে। ওই কমিটিতে নাম রয়েছে জামায়াতে ইসলামের রোকন দম্পতির পুত্র ও ক্যাডার ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন এবং তার সহযোগী ক্যাডার আসিবুর রহমান ফারহানের নামও। এছাড়া ওই কমিটিতে আরও রয়েছেন স্পষ্ট আওয়ামীলীগ বিরোধী হিসেবে পরিচিত, কিন্তু হাল আমলে ভাই বাহিনীর এক ঝাঁক হাইব্রিড নেতা। এরা হলেন সারোয়ার হোসেন সন্টু, আ. রাজ্জাক মোল্লা, নিশান মাহমুদ শাহীন, কাওসার আকন্দ, গোলাম মো. নাসির, সৈয়দ মোকাররম আলী আশফাক, আব্দুর রহমান কনক, মো.বিল্লাল হোসেন, মো. সেলিম প্রমুখ। এদের কেউ কেউ ১৯৯৪ সালে ফরিদপুরে আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মানে নির্মিত তোড়ন ভাঙচুর করেছিলেন, যারা শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ওই কমিটিগুলোতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, এক সময়ে জাতীয় পার্টি নেতা এডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা ও ফরিদপুর জেলা পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান, এক সময়ের জাপা নেতা এবং হাল আমলের আওয়ামীলীগার লোকমান হোসেন মৃধার নামও রয়েছে। ভারতীয় ভোটার তালিকায় নাম থাকায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে।

আওয়ামীলীগ সভাপতির ফরিদপুর সফর সফল করতে যে ১৩ টি কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার চারটিতে নাম রয়েছে এলজি আর ডি মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের নাম। যদিও অলিখিতভাবে তিনিই সকল কমিটির সমন্বয়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের সর্বেসর্বা হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, সেখানে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদের আনাগোনা অলিখিতভাবেই নিষিদ্ধ।জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকার সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন দলটির স্থানীয় পর্যায়ের হাইব্রিডরা।

দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ফরিদপুরে যাওয়া নিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষের সাথে। তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করে একটানা ৪৭ মাস কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। আওয়ামীলীগ বিভাজিত হয়ে আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠন হলে ফরিদপুরের অনেক আওয়ামীলীগ নেতাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় বিপুল ঘোষ সাহসিকতার সাথে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে ফরিদপুরে আওয়ামীলীগকে দাঁড় করিয়েছেন।বিপুল ঘোষ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় কৃষক লীগেরও শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। সেই ত্যাগী ও সাহসী নেতা বিপুল ঘোষ গভীর বেদনার সাথে বলেন, 'আমার দলের নেতা আমার প্রাণের নেতা শেখ হাসিনা ফরিদপুরে আসছেন, আর আমি মঞ্চের বহুদূরে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলবো! কেউ আমাকে একবার ডেকেও জানাবেন না, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফরিদপুরে আসছেন! এ কেমন নিয়তি আমার'!

(পিএস/অ/মার্চ ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test