E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ৮ প্রস্তাবনা

২০২৫ এপ্রিল ২২ ১৪:২৯:১৫
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ৮ প্রস্তাবনা

স্টাফ রিপোর্টার : গত নয় বছরের বা ৩১১৪ দিনের মাঝে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন অর্থাৎ এক শতাংশ নির্মল বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত ‘বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট নয় বছরের বায়ুমান সূচক এর উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, গত ৯ বছরে ঢাকার মানুষ ৬২৪ দিন (২০ শতাংশ) মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন (২৮ শতাংশ) সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন (২৭ শতাংশ) অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন (২১ শতাংশ) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন (৩ শতাংশ) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হলো যথাক্রমে ২ ও ৩৫ দিন।

তিনি আরও বলেন, গত ৯ বছরের মধ্যে ঢাকায় ২০২৩ এবং ২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর দিনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ৮৬ এবং ২০২৩ সালে অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ১৩৩। কিন্তু ২০২৩ সালে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪ দিন ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি ছিল। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের ৩৬৬ দিনের মধ্যে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ দিনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৫ দিনে।

বায়ুদূষণ রোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বায়ুদূষণের মতো মারাত্মক সমস্যার সমাধানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার হতে পারে একটি কার্যকর পদক্ষেপ। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, ভূ-তাপীয় শক্তি ও বায়োমাস শক্তির মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত শক্তি, যা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব। এই জ্বালানিগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় বায়ুদূষণ কমানোর পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে, যা গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করলে কার্বন নিঃসরণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। সৌর প্যানেল ও বায়ু টারবাইন সরাসরি প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটি জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অধিক কার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদে কম ব্যয়বহুল। এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব।


সংবাদ সম্মেলনে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আটটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
১. বায়ুদূষণকারী মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানো।

২. বায়ুদূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

৩. বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা।

৪. বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজসহ সব স্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামানো।

৫. আইইপিএমপি সহ বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা।

৬. বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পকারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।

৭. সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো, গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া।

৮. গৃহ অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জীবাশ্ম জ্বলানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করা।

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাপার সহ-সভাপতি ড. এম ফিরোজ আহমেদ, মহিদুল হক খান ও অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সুমন প্রমুখ।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ২২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২২ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test