E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘সরকার জীবিত অবস্থায় জাতীয় পুরস্কার দিতে চায়’

২০২৫ মার্চ ২৫ ১৩:২০:৩৪
‘সরকার জীবিত অবস্থায় জাতীয় পুরস্কার দিতে চায়’

স্টাফ রিপোর্টার : আগামীতে জীবিত অবস্থায় জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার নিয়ম চালু করতে অন্তর্বর্তী সরকারের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জীবদ্দশায় পুরস্কার পেলে দেশ, ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য যে আনন্দ তা মরণোত্তর পুরস্কারে পাওয়া যায় না। আমরা যেন আগামীতে একটা নিয়ম করতে পারি, মরণোত্তরদের পালা শেষ করে দিয়ে জীবিত অবস্থায় যারা আছেন তাদের পুরস্কার দেই। তাদের প্রতি সম্মানটা দেই।

বাবার পদক প্রাপ্তির আনন্দের কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খানের (মরণোত্তর) সন্তান অরণী খান বলেন, বাবা জীবিত অবস্থায় এ সম্মাননা পেলে আমাদের আনন্দ অনেক বাড়ত। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ যে সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য বরেণ্য ব্যক্তি জীবিত আছেন, জীবিত অবস্থায় তাদের যেন যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়।

পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ নিয়ে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠান আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার চাইতে জীবদ্দশায় পুরস্কারটা পেলে যে আনন্দ দেশের জন্য, পরিবারের জন্য, ব্যক্তির জন্য, তা মরণোত্তর পুরস্কারে পাওয়া যায় না। যাকে আমরা সম্মান দেখাচ্ছি তিনি আমাদের সঙ্গে নেই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ যারা স্বাধীনতা পদক পেলেন, তারা জীবদ্দশায় এই সম্মান দেখতে পাননি, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তবে জাতি তাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাজ যুগ যুগ ধরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তরুণদের মধ্যে অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেবে।

বরেণ্য ব্যক্তিদের পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের জাতিকে মহান উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। পুরস্কার দিয়ে শুধু তাদের সম্মানিত করছি না বরং জাতি হিসেবে নিজেদের সম্মান তাদের মাধ্যমে পাচ্ছি। তারা প্রত্যেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুল পরিচিত। তারা জাতির জন্য অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। তাদের কথা জীবদ্দশায় স্মরণ করতে না পারলে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাব। যাদেরকে এ সম্মান দিতে চাই, যথা সময়ে সেটা যেন দেই।

প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যে ২৫ মার্চের কালরাত এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে এদেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র ও গুম-খুনের রাজত্ব চালিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের কারণে আমরা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ আমরা কোনোক্রমেই বৃথা যেতে দেব না।

এ সময় পুরস্কার প্রাপ্তদের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করতে পেরে গর্বিত উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সম্মাননা স্মারক আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে জেন-জি প্রজন্ম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের অনুপ্রেরণার নাম বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ন্যায়বিচারের জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য জোরালো প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত তিনি হয়েছিলেন। তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।

এবার পুরস্কার প্রাপ্ত সাতজনের মধ্যে ছয়জনই মরণোত্তর সম্মাননা পেয়েছেন। কেবল শিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে বদরুদ্দীন উমর জীবদ্দশায় এ পুরস্কার পান। তবে আগেই এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করবেন না। তার পদকের রেপ্লিকা জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করবে সরকার।

বাকি পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।

এছাড়া সরকার জানিয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের জেড-ফোর্সের কমান্ডার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ২০০৩ সালে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) বহাল রাখা হচ্ছে।

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৬ সালে বীর উত্তম জিয়াউর রহমানকে দেওয়া এ পুরস্কার বাতিল করেছিল।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ।

১৯৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩২৪কে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

(ওএস/এএস/মার্চ ২৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test