E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

পঞ্চগড়ে পতাকা বৈঠক

গত ৩০ বছরে সীমান্তে ২ হাজার হত্যা 

২০২৫ মার্চ ১০ ১৮:৪১:১৮
গত ৩০ বছরে সীমান্তে ২ হাজার হত্যা 

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় : গত ৮ মার্চ শনিবার রাত তিনটার দিকে পঞ্চগড় সীমান্তের অদূরে ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন (৩৬)নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত আল আমিন পঞ্চগড় সদর উপজেলা হাড়িভাসা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়া গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে। আল আমিনের হত্যাকাণ্ড ঘিরে আজ সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি ও বিএসএফের সেক্টর পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই বৈঠকে বিজিবি'র ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল গোলাম রব্বানী পিএসসি, জি সেক্টর কমান্ডার। বিজিবি ১৮ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনির, নীলফামারী বিজিবি ৫৬ ব্যাটলিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল বদরুদ্দোজা।

প্রতিপক্ষ বিএসএফের নেতৃত্ব দেন শিলিগুড়ি সেক্টর কমান্ডার শ্রী পি কে শিং।সীমান্তে বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধে দু'দেশের সীমান্তে রক্ষীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা, পর্যালোচনা, প্রতিবাদ এবং নিন্দাবাক্য বিনিময় হয়।

বৈঠক শেষে ঠাকুরগাঁও সেক্টর সাংবাদিকদের বলেন, "সীমান্তের প্রতিটি হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কঠোর প্রতিবাদ করা হয়েছে। কেউ অপরাধ করলে তাকে সীমান্ত আইন লঙ্খন, পাসপোর্ট আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড, পাচার বা চোরাচালান অপরাধের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা হতে পারে।বেসামরিক মানুষ হত্যা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিএসএফের এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।

তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও সীমান্ত হত্যা প্রতিরোধকল্পে বিজিবি টহল কার্যক্রমের সাথে সাথে সীমান্তের অধিবাসীদের সীমান্তের আইন মেনে চলার জন্য সচেতন করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সহসায় সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হবে।

নিহত আল আমিন ৮ মার্চ শনিবার রাতে ভারতের ভাটপাড়া গ্রামে প্রবেশ করলে বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনাটি বাংলাদেশের ভিতরগড় বিওপি সীমান্ত পিলার ৭৪৪ এর সাবপিলার ৭ এস হতে আনুমানিক ৫০গজ ভারতের অভ্যন্তরের ভাটপাড়া গ্রামে। নিহত আল আমিন দীর্ঘদিন যাবৎ ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু পাচার করতো বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছে।

ঘটনার দিন, নিহত আলা আমিন,জিল্লুরসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০জনের একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারিরা শনিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে গরু চুরি প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে প্রবেশ করে। সংঘবদ্ধ এই দলটি ভারতে প্রবেশ করলে বিএসএফ তাদের বাধা দেয়, এতে করে বিএসএফের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি থেকে ধস্তাধস্তি শুরু হয়, একপর্যায় আল আমিনদের সঙ্গে থাকা দা দিয়ে বিএসএফদের আঘাত করে; বিএসএফও আত্মরক্ষায় গুলি ছুঁড়ে। গুলি লাগে আলা আমিনের বুকে। এতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।

পরে নিহতের লাশ বিএসএফরা ভারতের জলপাইগুড়ি হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় বিজিবি নীলফামারি ৫৬ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল বদরুদ্দোজামানের পক্ষ থেকে পরেরদিন রবিবার ৯ মার্চ সকালের দিকে বিওপি পর্যায়ের এক পতাকা বৈঠকে কঠোর প্রতিবাদ জানান।

পঞ্চগড় সীমান্তে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকান্ডটি ঘটে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর। ওই সময় ভারতের বিএসএফ ৩২ ব্যাটলিয়নের শ্যামগজের টহলরত মদ্যপায়ী এক বিএসএফ ভোরের বাংলাদেশের মাঝিপাড়া বিওপি সংলগ্ন ময়নাকুড়ি গ্রামে প্রবেশ করে ঘুমান্ত মানুষের উপর গুলি চালায়, ওইদিন সংশ্লিষ্ট গ্রামের একই পরিবারের ২ শিশুসহ তিনজন নিহত হয়। এই নিয়ে সারা বিশ্বের মানবাধিকার কর্মী সোচ্চার হলে, কয়েক মাস সীমান্ত হত্যা বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে একই কায়দায় বিএসএফ হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিগত ৩০ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ -ভারতের সীমান্তের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটারের (২৫৪৫ মাইল) বিভিন্ন প্রান্তে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে প্রায় ২ হাজার বেসামরিক মানুষের নিহত হয়েছে। এখন যা চলছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে নিহত সংখ্যা ৮০ জন। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে নিহত হয়েছে ৬১২ জন। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত নিহত ১৪৬ জন ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত নিহত ৭৭৩ জন।

সম্প্রতি একটি মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত গত ১৬ বছরে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের গুলিতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫৮৮ জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। এসময় আহত হয়েছে ৭৭৩ জন। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী সীমান্তে সবচেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে ২০০৯ সালে। সেই বছর বিএসএফের হাতে মোট হতাহতের শিকার হোন ১৭৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক, তাদের মধ্যে ৯৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর ৭৭ জন আহত হয়েছে।

এছাড়া ২০১০ সালে ৭৪ জন, ২০১১ সালে ৩১ জন, ২০১২ সালে ৩৮ জন, ২০১৩ সালে ২৯ জন, ২০১৪ সালে ৩৫ জন, ২০১৫ সালে ৪৪ জন, ২০১৬ সালে ২৯ জন, ২০১৭ সালে ২৫ জন, ২০১৮ সালে ১১ জন, ২০১৯ সালে ৪১ জন, ২০২০ সালে ৫১ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২২ সালে ১৮ জন, ২০২৩ সালে ২৮ জন ও ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ জনকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এখন যা চলছে। এসময়ের মধ্যে ভারতের ১৯ জন সেনা সদস্য নিহত এবং ৪ হাজার ২২৫ জন বিএসএফ চোরাকারবারিদের আঘাতে মারাত্মক আহত হবার ঘটনায় ঘটেছে।

পঞ্চগড় বিজিবি'র ১৮ ব্যাটলিয়নের সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০বছরের ব্যবধানে পঞ্চগড় সীমান্তের আটোয়ারি ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাদেশ ভারতের মোট ১৯১টি সীমান্ত পিলার নিঃচিহ্ন হয়েছে নদীর তলদেশ থেকে ড্রিলড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে। নিশ্চিহ্ন পিলারগুলো হচ্ছে আটোয়ারি উপজেলার নদীডাঙ্গী ১টি, দারখোর ১৪টি, গিরাগাঁও ১টি, রমজানপাড়া ১০টি, আমতলা ২টি, বোদাপাড়া ২টি, কাকপাড়া ২টি। তেঁতুলিয়া উপজেলার খেঁকীপাড়া ৩টি, বকশীগঞ্জ ১৪টি, লালটুগজ ৩টি, ময়নাগুড়ি ৪টি, বালাচন্ডি ২টি, পাঠানপাড়া ৩টি, শেখগঞ্জ ৭টি, খাটিয়াগজ ৩টি, মন্ডলপাড়া ১৩টি, প্রেমচরণজোত ২৭টি, তেলিপাড়া ২টি, সিদ্দিক নগর ৬টি, ঈদগা বস্তি ২টি, ডাক বাংলা ৮টি, বারঘড়িয়া ১টি, সর্দারপাড়া ৩১টি, উত্তর কাশিমগঞ্জ ৩টি, সন্ন্যাসীপাড়া ১০টি, প্রধানপাড়া ১টি, বোগলাহাটি ২টি ও কিত্তনপাড়ায় ১টি।

(আরএআর/এসপি/মার্চ ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১১ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test