E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে অস্বীকারের প্রবণতা দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক’

২০২৫ জানুয়ারি ৩০ ১৭:১৯:৫৪
‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে অস্বীকারের প্রবণতা দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক’

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কমুার নাথ এক লিখিত বিবৃতিতে বলেছেন, ২০ আগস্ট, ২০২৪ পরবর্তীতে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২১ আগস্ট, ২০২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে গ্রামীণ পর্যায়ে মোট ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে এমনও সহিংসতার ঘটনা রয়েছে যেখানে একই ঘটনায় একাধিক পরিবার আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা- ২৩টি, নারী নির্যাতন/ধর্ষণ/গণধর্ষণ- ০৯টি, উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট  ও অগ্নিসংযোগ- ৬৪টি, কথিত ধর্মঅবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার ও নির্যাতন- ১৫টি, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ- ৩৮টি এবং জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল- ২৫টি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী নির্বিশেষে দৈহিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় বাংলাদেশের আপামর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক ট্যাগ’ দিয়ে অস্বীকার করা এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না আনার কারণে সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলে সংখ্যালঘুরা আরো হুমকির মুখে পড়েছে, পড়ছে। পরিষদ মনে করে, উপরোল্লিখিত তথ্যাদি সার্বিক ঘটনাবলীর আংশিক চিত্রমাত্র। কেননা, ইতোপূর্বেকার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-র সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থাপিত ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করা হয়েছিল ঐক্য পরিষদের সারাদেশের শাখা সংগঠনগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু এবারে তা সম্ভব হয়নি। কারণ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিদ্যমান বাস্তবতায় অব্যাহত হুমকি-হামলা এবং মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় জড়িত হবার কারণে তাদের পক্ষে মাঠ থেকে তথ্যাবলী সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈষম্যের চালচিত্র উপস্থাপন করতে গিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব জানান।

সংবাদ সম্মেলনে দুঃখের সাথে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কিত পূর্বেকার ঘটনাবলীকে গুরুত্ব না দিয়ে তা মিথ্যা, অতিরঞ্জিত ও বানোয়াট বলে অস্বীকারের কৌশল নেয়া হয়। কিন্তু জাতীয়- আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম উক্ত রিপোর্টে উল্লেখিত সহিংসতার ঘটনার উপর বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করায় এবং দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট ও সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলীকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বীকার করে যে, বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং তা বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৮টি মামলায় ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে গত ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং পুলিশের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে ঐক্য পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত অভিযোগের ২০১০টি ঘটনার মধ্যে ১৭৬৯টি ঘটনার কথা স্বীকার করে। এর মধ্যে ১৪১৫টি অনুসন্ধান করেছে ও বাকি ৩৫৪টির অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ৬২টি মামলা দায়ের ও ৯৫১টি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে এবং ৩৫ জন অপরাধীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রেস উইং আরো বলে, পুলিশী তদন্তমতে ১৭৬৯টি ঘটনার মধ্যে ১২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা দিক না কেন ঐক্য পরিষদ মনে করে, গত ৪ আগস্ট থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে তাদের বাড়িঘর, উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত সকল হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, হত্যাসহ যাবতীয় অপরাধের প্রত্যেকটি ঘটনা সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এ ধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা শুধু ফৌজদারী অপরাধই নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ।

সংবাদ সম্মেলনে বিচারহীনতার রাজনীতি এবং সংস্কৃতি বন্ধ করে দশকের পর দশক ধরে চলা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার সংখ্যালঘুদের জন্যে ন্যায়বিচার আজ নিশ্চিত করার সময় এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতিগত সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতাও ক্রমশই বাড়ছে। গত ১৫ জানুয়ারি আদিবাসী সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা ও আদিবাসী হিসেবে তাদের পরিচয়ের দাবিসহ নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চিত্রকর্ম বা গ্রাফিতি বাদ দেয়ার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে গেলে চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী তাদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায়। আদিবাসী শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ অনেকেই এতে গুরুতরভাবে আহত হন। এদের মধ্যে অনেকে এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের অনেকেই এখনো গ্রেফতার হয়নি, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাম্প্রদায়িক ও মানবতাবিরোধী এ সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে। অনতিবিলম্বে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে সরকারের কাছে পুনরায় জোর দাবি জানাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. দিপংকর ঘোষের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতিত্রয় অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, ঊষাতন তালুকদার, নির্মল রোজারিও এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনন্দপ্রিয় ভিক্ষু। এ সময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, রঞ্জন কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, যুব বিষয়ক সম্পাদক বলরাম বাহাদুর, সহ-সম্পাদক শান্তি রঞ্জন দাস, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, সহ-সভাপতি সুবল ঘোষ, ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব সরকার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে সংবিধান সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে প্রদত্ত রিপোর্টে ৭২’র সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’সহ রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ বিলোপ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ শব্দটি পরিবর্তনের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধীতা করে সংবিধানের বিদ্যমান প্রস্তাবনা ১২ ও ২৮ অনুচ্ছেদ বহাল এবং রাষ্ট্রধর্ম সম্বলিত ২ক অনুচ্ছেদ বিলোপের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ কোন সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি না রাখায় এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনে অংশীজন হিসেবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে আলোচনার কোনরূপ উদ্যোগ না নেয়ায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সংবিধানের ‘রাষ্ট্রধর্ম’ সম্বলিত ২ক অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রস্তাব করে বলা হয়, এই অনুচ্ছেদটি সংবিধানের মূল প্রস্তাবনার ‘সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত’ করার পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিক এবং তা বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্বাকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা’ সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ বহাল রাখার উপর জোর গুরুত্বারোপ করে সংবাদ সম্মেলনে এ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে বাদ দেয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণের নামান্তর এবং রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে যে সকল বৈষম্য বিদ্যমান তা অস্বীকার করা, সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং সকল ধর্মের জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্যে সরকারের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে তা থেকে রাষ্ট্রকে মুক্তি দেয়া।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য দূর করার জন্যে- ১) সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, ২) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও ৩) সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় এবং বলা হয়, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবনে ও সমাজে বিরাজমান বৈষম্য দূর করা এবং আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় রাখা অত্যাবশ্যক।

সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যেমন- বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, জাতীয় তথ্য কমিশনসহ সকল ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ২০% প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারিত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিতের দাবি উত্থাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করার লক্ষে বাংলাদেশে ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটে তাদের জন্যে ৬০টি আসন সংরক্ষণের প্রস্তাবনা সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের বিবেচনার নিমিত্তে উত্থাপন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের বৈষম্যমূলক আচরণ প্রসঙ্গে মব জাস্টিসের নামে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের জোরপূর্বক বিতাড়ন ছাড়াও ৪০তম ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে চাকুরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮০৪ জন সাব ইন্সপেক্টর সারদা পুলিশ একাডেমীতে প্রশিক্ষণকালে কথিত শৃংখলাভঙ্গের ঠুনকো অভিযোগ এনে গত ২১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ৪ ধাপে ৩২১ জনকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণরত ৮০৪ জনের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা ছিল ১৭৫ জন যা মোট প্রশিক্ষণার্থীর ২১.৭৭%। অব্যাহতি পাওয়া ৩২১ জন প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ১০৩ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। যা মোট অব্যাহতিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩২.০৯% এবং মোট প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ১২.৮১%। অর্থাৎ মোট প্রশিক্ষণার্থী মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২১.৭৭% থেকে (১৭৫-১০৩ = ৭২ নিয়োগপ্রাপ্ত) ৮.৯৬% নামিয়ে নেয়া হয়েছে। ৫৫ জন নারী কর্মকর্তার মধ্যে ৩৩ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৬ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, যা মোট অব্যাহতির ৪৮.৪৮%। যাদেরকে অব্যাহিত দেয়া হয়েছে তাদেরকে যথাযথ বিধি অনুসরণ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি বলে জানা যায়।

সবংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে শিক্ষানবিশ সহকারি পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণকালীন সময়ে ৬৬ জনের মধ্য থেকে ২৫ জনকে অজানা কারণে কারণদর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। পরবর্তীতে এর মধ্য থেকে ২১ জনকে বাদ দেয়া হয়। যার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্পদ্রায়ের ৯জন। পুলিশ ক্যাডারে ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে ৪৩ তম বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০৬৪ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক উত্তীর্ণ ঘোষিত ২১৬৩ প্রার্থীর মধ্যে মোট ২৬৭ (সাময়িক অনুপযুক্ত ২২৭ জন + স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন) জনকে বাদ দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ১৮৯৬ জনকে উপযুক্ত ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ ৪৩তম বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের গোয়েন্দা বিভাগ কর্তৃক যাচাই-র নামে ২২৭ জনকে বাদ দেয়া হয়। বাদ পড়াদের মধ্যে ৮২ জনই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, যা মোট বাদ পড়া ৩৬.১২%। সহকারী কমিশনার (প্রশাসন) পদে বাদপড়া ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, যা মোট বাদপড়া ৫৩.৮৪%। সহকারী সচিব (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) পদে বাদপড়া ৩ জনে মধ্যে ৩ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যা ১০০%। সহকারী কর কমিশনারের ক্ষেত্রে বাদপড়া ৭ জনের মধ্যে ৫ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বাদপড়ার হার ৭১.৪২%। সহকারী কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) যে ১ জন যোগ্য বিবেচিত হয়েছিল তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। একইভাবে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে ১৫ অক্টোবরের সার্কুলারে উল্লেখিত ২জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থীর নাম ৩০ ডিসেম্বরের সার্কুলারে হারিয়ে গেছে। অনুরূপভাবে প্রভাষক (সমাজবিজ্ঞান) পদে বাদ দেয়া ৫ জনের ৫ জন, প্রভাষক ইংরেজী পদে বাদ পড়া ৮ জনের ৬ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অন্যান্য পদসমূহে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, হাইকোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ১ জন মাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। যতটুকু জানা গেছে, উচ্চতর আদালতে এ্যাটর্নী জেনারেল থেকে সহকারী এ্যাটর্নী জেনারেল পদে নিয়োগকৃত ২২৮ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল ও ১ জন সহকারী এ্যাটর্নী জেনারেল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সরকারি কর্ম কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অনতিবিলম্বে এ ধরনের বৈষম্যমূলক বন্ধের জন্যে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি এ ধরণের আচরণ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের পর্যায়ক্রমিকভাবে নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ার একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল শ্লোগান ছিল ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’। এক্ষেত্রে সরকার মেধাকে গুরুত্ব না দিয়ে কোটাকেই বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রক্রিয়া বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

সংবাদ সম্মেলনে দলিত ও ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর জীবনের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার জন্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আলাদা কোন কমিশন গঠিত না হওয়ায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এবং বলা হয়, এদের জীবনে বিরাজিত বৈষম্য দূর করার জন্যে রাষ্ট্র ও সরকারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে অনতিবিলম্বে প্রত্যর্পণ, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের যথাযথভাবে কার্যকরীকরণ, সকল সংখ্যালঘু ধর্মসম্প্রদায়ের ধর্ম পালনে অধিকতর উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সরকারি ছুটিসমূহের অতিরিক্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-এ ৩ দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় ১ দিন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে’তে ১ দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ দেশব্যাপী আটককৃত সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবির পাশাপাশি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্তসহ সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।

(পিআর/এসপি/জানুয়ারি ৩০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test