E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

‘পাহাড়ের মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হবে’

২০২৫ জানুয়ারি ০৬ ২৩:৫৪:০১
‘পাহাড়ের মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হবে’

স্টাফ রিপোর্টার : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আমাদের পাহাড়ের মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হবে। আমরা সবাই বাঙালি না।

বাঙালি ছাড়াও যারা আছেন, তাদেরও বৈষম্যহীনভাবে অধিকার দিতে হবে এবং সম্মান করতে হবে।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসিমুল গণি রচিত ‘রিজিওনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সিএইচটি পিস অ্যাকর্ড ১৯৯৭: এন আনফিনিশড পিস বিল্ডিং মডেল অব বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়া এবং সাময়িকী ডিপ্লোমেটস ওয়ার্ল্ড।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার যে কাজটি আমাদের ছিল, তা আমাদের শুরু করতে হবে। আমাদের এ নিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে শান্তি ফিরে আসে। কিছু উপাদান (ফ্যাক্টর) রয়েছে, এখানকার অশান্তি থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করবে। আপনাকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যখন মানুষ বুঝতে পারবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা লাভবান হচ্ছে, তখন শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। এখানে প্রশ্ন আসে, শান্তি প্রতিষ্ঠা কি সবার জন্য লাভজনক। প্রতিটি সমাজে একটি শ্রেণি থাকে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, অশান্তি ও সংঘাত থেকে লাভবান হয়।

শান্তি প্রতিষ্ঠায় সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক নিয়ে তিনি বলেন, অভাবগ্রস্ত মানুষেরাই সুযোগের সন্ধানে সেখানে যায়। এছাড়া আরেক শ্রেণির মানুষ রয়েছে, যারা ভিন্ন সুযোগের সন্ধানে সেখানে যায়। সেখানকার জমি ব্যবহার করে কেউ সৎ বা কেউ অসৎ উপায়ে ধনী হয়।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, বইটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন অন্তর্বর্তী সরকার তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত লোকজনের মাঝে নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও সামাজিক সংহতি রক্ষায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো। চার মাস আগে আমরা সেখানে উত্তেজনা, বিক্ষোভ ও অশান্ত পরিস্থিতি দেখেছি। মব জাস্টিসের কারণে সেখানে তিন-চারদিনের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্তত পাঁচ থেকে ছয়জন উপদেষ্টা সেখানে গেছেন।

তার মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার মধ্যে নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় বিষয়, রাজনৈতিক বিষয়ক, ভূমির মালিকানা এবং সম্পূরক অর্থনীতি ও সামরিক উপাদান রয়েছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি সইয়ের ২৭ বছর পরও শান্তি থেকে গেছে অধরা। কারণ বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এলেও চুক্তির বেশিরভাগ শর্তই পূরণ করেনি। প্রতি মাসে খুনোখুনিসহ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জড়াতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, সদ্য প্রকাশিত বইটিতে সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, যা করতে হবে সামরিক প্রয়াসের বাইরে গিয়ে। সমস্যার সমাধানে বেসামরিকীকরণের কথা বলা হয়েছে। মনে রাখতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই এখানকার শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সমন্বিত উদ্যোগে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অংশীদারদেরও যুক্ত করতে হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বইতে ব্রিগেডিয়ার সাহেব বলেছেন, সেখানে পলিসি কি হবে সেটা নিয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষমতাধর শক্তি তারা তো তাদের খেলা খেলবে। কিন্তু আমাকে আগে আমার নীতির ওপর মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের কৌশলগত সমস্যার চিন্তায় শুধু সামরিক দিক থেকে দেখলে হবে না। সামরিক বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সামরিক বিষয় সব কিছু বুঝতে পারে না। এ সমস্যা (সমাধান) সামরিক নয়, এমনকি রাজনৈতিকও নয়। এ সমস্যা নাগরিক সমাজ থেকে শুরু হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকজনকে যদি আমরা এলিয়েন হিসেবে বিবেচনা করতে থাকি, তাহলে তো তারা আরও এলিয়েন হয়ে পড়বে।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করত হলে বাধাটা কোথায়, তা আমাদের স্বীকার করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আনন্দ ও স্বার্থের জন্য তাদের যুক্ত করতে হবে। শুধু চাপিয়ে দিলে হবে না। এ ধরনের নজির ইতিহাসে আমরা বহুবার পেয়েছি। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজে যে বর্ণবাদ আছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে যেভাবে অধস্তন হিসেবে দেখে, সে দৃষ্টিভঙ্গি দুদিনে বদলাবে না। সে জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগে পরিবর্তন আনতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে আমরা এটা বাস্তবায়িত করতে চাইনি। বাস্তবায়ন করতে চাইলে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কী চায় সেটা আমাদের মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়ন যদি করি, তবে কোনো অবজেকটিভ নেই যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বাংলাদেশ থেকে আলাদা হতে চাইবে। যারা সেই প্রচারণা করছেন, আপনারা যারা ভয় পাচ্ছেন যে সেখানে জুম্মা ল্যান্ড বিচ্ছিন্ন ভূমি হচ্ছে সেটার পেছনে আমাদের পাশের দেশের স্বার্থ থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের স্বার্থ থাকতে পারে। শেষ বিচারে মানুষকে যেন ভুল বুঝানো না হয়। মানুষ কখনো নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় না। যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কথা ভাবি, বাংলাদেশের সঙ্গে থাকলেই তাদের লাভ বেশি। শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না। কাজে সেটা প্রমাণ করতে হবে। তাদের বিষয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test