E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে, আশা টবি ক্যাডম্যানের

২০২৪ ডিসেম্বর ১১ ১৩:১৮:২৭
ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে, আশা টবি ক্যাডম্যানের

স্টাফ রিপোর্টার : ভারত বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে সেহেতু শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারত কী সিদ্ধান্ত নেবে, সে বিষয়ে আমি আগাম কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না।

ভারত যেহেতু গণতান্ত্রিক দেশ এবং তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই শেখ হাসিনার যদি রায়ের মাধ্যমে সাজা হয়, এ বিষয়ে ভারত বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাবে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন টবি ক্যাডম্যান।

তিনি বলেন, আমি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিফ প্রসিকিউটরের পরামর্শ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। এ পর্যন্ত আমার বাংলাদেশে দুইবার আসা হয়েছে। আমি মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার প্রক্রিয়া চালানোর বিষয়ে পরামর্শ দেব। বিগত সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপারাধ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা অতটা ভালো ছিল না, এটা বলাই যায়। সে সময়ের বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বেশি ছিল।

টবি ক্যাডম্যান বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় স্পষ্টভাবে বলেছি—এ যাবৎকালে যত বিচার প্রক্রিয়া হয়েছে, তার মধ্যে এবারের বিচার প্রক্রিয়াটি খুবই স্বচ্ছ হতে হবে। পাশাপাশি আজ প্রসিকিউটর টিমের সঙ্গে আলোচনা করে যা দেখেছি, তারা খুবই সুন্দরভাবে এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করছেন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে বলতে চাই—এই বিচারকাজের বিষয়ে আপনাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে, যাতে করে প্রসিকিউটর টিম ও তদন্ত সংস্থা সুন্দরভাবে তাদের কাজ করে এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে। এবারের বিচার প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমার একটাই অনুরোধ থাকবে, আমি যাদের সঙ্গে কাজ করছি, তাদের (প্রসিকিউটর টিম) কাজে যেন কোনো প্রকার পলিটিকাল হস্তক্ষেপ না করা হয়। এই বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক কমিউনিটির পুরো সাপোর্ট থাকবে। এই বিষয়ে আমি জাতিসংঘ, ইউকে গভর্নমেন্ট ও আমেরিকার গভর্নমেন্টসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করেছে। তারা আশাবাদী এই বিচারকাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে আবারো আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

শেখ হাসিনাকে কীভাবে বা কোন প্রক্রিয়ায় ভারত থেকে এনে বিচার করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে টবি ক্যাডম্যান বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে সেহেতু শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারত কী সিদ্ধান্ত নেবে, সে বিষয়ে আমি আগাম কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। ভারত যেহেতু গণতান্ত্রিক দেশ এবং তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই শেখ হাসিনার যদি রায়ের মাধ্যমে সাজা হয়, এ বিষয়ে ভারত বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে দেশে পাঠাবে।

তিনি বলেন, একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টার হিসাবে আমার প্রধান কাজ হচ্ছে, এই বিচার প্রক্রিয়াটি যেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে প্রসিকিউটর টিমকে সহায়তা করা। এই মামলার আসামির (শেখ হাসিনা) মৃত্যুদণ্ড হবে বা মুক্তি পাবেন, তা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়।

মামলাটি আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করার কোনো সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে টবি ক্যাডম্যান বলেন, প্রথমত বাংলাদেশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের মেম্বার। তাই এখানে বাংলাদেশ যদি কোনো কারণে এই বিচারকাজ পরিচালনায় ব্যর্থ হয় ও অপারগতা প্রকাশ করে, তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের জুরিসডিকশন আছে, এ বিষয়ে নিজ থেকে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবে। যেভাবে পুতিন ও নেতানিয়াহুর বিষয়ে করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট সব সমস্যার সমাধান নয়।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছিল, সে সময় অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। তখন তাকে আটকে দেওয়া হয়েছিল। এরপরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এসেছিলেন ব্রিটিশ এই আইনজীবী। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি। বর্তমানে টবি ক্যাডম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test