E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি 

২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৯ : ঐক্য পরিষদ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৭:১৫:৫২
২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৯ : ঐক্য পরিষদ

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গত ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯ জন নিহত হয়েছেন। এবং চারজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এসময় এই কদিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, এ সময়ে দেশের ৬৮টি জেলা ও মহানগরে সর্বমোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৯ জন হত্যার শিকার হয়েছে। ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪ জন। ৯১৫টি বাড়ীঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ৯৫৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বসতবাড়ী দখল হয়েছে ১টি। জমি/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল হয়েছে ২১টি। শারীরিক নির্যাতনে যখম হয়েছে ৩৮ জন। সর্বমোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ১৭০৫টি পরিবারের সদস্যরা সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে। উক্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ১৫৭টি পরিবার রয়েছে যারা ইতোমধ্যে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এবং বর্তমানে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন বাকপ্রতিবন্ধী।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার ১৭০৫টি পরিবারের মধ্যে ৩৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের পরিবার রয়েছে, যাদের বসতবাড়ী লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিবারের জমি জবরদখল করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রতিটি বিভাগেই এ ঘটনা ঘটেছে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও লোকজন আক্রান্ত হয়েছে। এ ১৭ দিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নর-নারী, কিশোর-কিশোরী, শিশু ও প্রতিবন্ধি মানুষ সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে এবং ট্রমায় আক্রান্তের সংখ্যা সারা দেশে আনুমানিক ২ কোটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা বর্তমানে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিন কালাতিপাত করছে।

ঐক্য পরিষদের সভাপতি মি. নির্মল রোজারিও তাঁর পঠিত বক্তব্যে এ চিত্র তুলে ধরে বলেন, স্বাধীন দেশে ১৯৭২ পরবর্তী ১৯৯০, ১৯৯২, ২০০১ থেকে ২০০৬, ২০১৩ থেকে ২০২১ এবং তৎপরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের বৃহদাংশ হিন্দু সম্প্রদায় নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিগত সামরিক-বেসামরিক কোন সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত হাজারো নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা কোনটিরই আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি বা দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের ১৯-২০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ২০২৪ এ নেমে প্রায় ৮.৬%-এ এসে দাঁড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় ও রঞ্জন কর্মকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট দিপংকর ঘোষ, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক বলরাম বাহাদুর, সহ-পেশাজীবী বিষয়ক সম্পাদক সুবীর দত্ত, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা প্রমুখ।

পঠিত বক্তব্যে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব Antonio Guterres-র কাছে শেখ হাসিনা পতন-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার ঘটনাবলীর পাশাপাশি ১৯৯০-র অক্টোবর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার ঘটনাবলীর নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ তদন্তের মধ্যে দিয়ে নিরুপিত করা হউক সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত সহিংস ঘটনাবলী রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক না সাম্প্রদায়িক। এসব ঘটনার জন্যে দায়ী ব্যক্তিদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উপর সংবাদ সম্মেলনে জোর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

এতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তথ্যানুসন্ধানে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় ২০০৯ সালে শাহাবউদ্দিন কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিটি ২০১১ সালে পূর্বতন সরকারের কাছে সুপারিশসম্বলিত রিপোর্ট পেশ করলেও তা’ আদৌ আলোর মুখ দেখে নি, সুপারিশ বাস্তবায়ন দূরের কথা। ২০১৩ সালের পর থেকে ২০২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে তারও কোন বিচার হয় নি। ২০২১ সালের দুর্গাপূজোর সময়কালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরুর পরপরই তৎকালীন এ্যাটর্নী জেনারেলের সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজের কাছে আবেদন দায়েরের সাথে সাথে তা স্থগিত হয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলা হয়, বিগত চার দশক ধরে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে যে সব সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলী ঘটেছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় রুজুকৃত দুটি হত্যা মামলায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, মানবাধিকার নেতা এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা দায়েরে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাহারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, দেশে বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টার্গেট করে সমাজের এক শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে, বাড়িঘরে আজও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্গাপূজোর প্রতিমা ভাংচুর করা হচ্ছে। চাঁদাবাজিও অব্যাহতভাবে চলছে। সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এক শ্রেণীর মানুষের মনোজাগতিক উপলব্ধিতে থাকা ভারতবিরোধীতা হিন্দুবিরোধীতায় পর্যবসিত হয়েছে। এরূপ মানসিকতাদোষে দুষ্ট এক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্বৃত্ত মহলবিশেষের প্ররোচনায় ও ইন্ধনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও পদত্যাগের হুমকি দিয়ে চলেছে। এসব ঘটনার সাথে যুক্ত দুর্বৃত্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানানো হয়।

মি. নির্মল রোজারিও মানবাধিকার নেতা রাণা দাশগুপ্তসহ সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলীর সুষ্ঠু তদন্ত এবং চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অনতিবিলম্বে অবসানের দাবিতে আগামী পরশু ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিকেল ৪টায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের ডাক দিয়েছেন। ঢাকায় এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে।

(পিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test