E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬২ সে.মি ওপরে

২০২৪ জুলাই ০৭ ১৩:৪০:০৬
যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬২ সে.মি ওপরে

স্টাফ রিপোর্টার : ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীসহ অভ্যন্তর্রীণ করতোয়া, ফুলজোড়, হুড়াসাগর ও চলনবিলের নদ-নদীর পানিতে নদী পারের চরাঞ্চল ও নিচু এলাকার মানুষের পাশাপাশি মহা সংকটে পড়েছে গবাদি পশুগুলো নিয়ে। বন্যায় গবাদিপশুর চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে জেলার প্রায় ৫০ হাজার গবাদি পশু। বন্যা দুর্গতরা নিজেদের চেয়ে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এদিকে, পানিবন্দি এসব গবাদি পশুর জন্য সরকারি ভাবে এখনো কোনো খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্গতরা।

রবিবার (৭ জুলাই) সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি, শাহজাদপুরের পাচিল এলাকায় দেখা যায়, পানি বৃদ্ধির কারণে বানবাসি মানুষেরা উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে থাকলেও গবাদি পশুগুলোকে পলিথিনের ছাউনিতে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ গবাদি পশুদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন। চরের জমিতেই জুটত গরুর খাবার। বন্যায় চরের পুরো এলাকা এখন জলাবদ্ধ। কোথাও নেই গবাদিপশুর চারণভূমি। অভাবের সংসারে কষ্টের পালন করা এসব পশু চুরি কিংবা হারানোর ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে কৃষকেরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫১ মিটার। গত ১২ ঘণ্টায় হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি না বাড়লেও বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৬ মিটার। গত ১২ ঘন্টায় ৩ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের গো-খামারি জলিল শেখ জানান, বন্যার কারণে তারা গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘাসের জমিগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা কোন মতে খড় খাওয়ায়ে পশুগুলি বাঁচিয়ে রেখেছেন। এছাড়া বন্যার সুযোগে খৈল ভুষিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে বিপাকে পড়েছে কৃষকেরা।

একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী গাভীগুলিকে খাবার দিতে না পারায় দিন দিন দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে ফলে তারা লোকসানে মুখে পড়ছেন। এব্যাপারে তারা মানুষের পাশাপাশি গরুর খাবার বিতরণের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। শুধুমাত্র ভূষির উপর খামার টিকিয়ে রাখা খামারিদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

কাজীপুরের শহীদ এম মনসুর আলী ইকোপার্কে আশ্রয় নেওয়া গবাদি পশুর মালিকেরা জানান, এক সপ্তাহ পার হলেও তারা কোনো গো-খাদ্য সহায়তা পাননি। উচ্চ মূল্যে খড় কিনে এক থেকে দুবেলা খাবার দিচ্ছেন। চারদিক পানিতে নিমজ্জিত থাকায় প্রাকৃতিক কোনো খাবার জোগাড় করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। নিজেরা দুবেলা খেতে না পারলেও গরুও খাবার জোগাড় করতে প্রতিদিন দূরের কোনো এলাকা থেকে কিছু ঘাস বা খর জোগাড় করে নিয়ে আসতে হচ্ছে তাদের অনেক সময় গরুগুলোকে বন্যার পানিতে সাঁতরিয়ে অন্য কোথাও উঁচু জমিতে নিয়ে যেতে হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু ইতিমধ্যে পানিবন্দি। এসময় গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগব্যাধি সৃষ্টি হয়। এজন্য আমরা পাঁচটি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। তারা নিয়মিত বানভাসি কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আর গবাদি পশুর খাদ্য সরবরাহের জন্য আমাদের বিভাগে কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পাওয়া গেছে পর্যাক্রমে বিতরণ করা হবে।

বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরেই যমুনার পানি দ্রুতগতিতে বেড়েছে। গত ১২ ঘন্টায় শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকলেও কাজিপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। আশা করছি দ্রুতই পানি কমে যাবে। এ মৌসুমে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, ইতোমধ্যে বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে জেলার ৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর ফসলি জমি। এসব জমির পাট, তিল, কলা ও মরিচ প্লাবিত হয়েছে। এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, জেলার ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩৬২টি পরিবারের ২৩ হাজার ৮৩৬ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৩৬ জন। তাদের মাঝে ইতিমধ্যে ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও নতুন করে ৪৪০ টন চাল, নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ রয়েছে।

(ওএস/এএস/জুলাই ০৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test